শোকস্তব্ধ: মা বিনাদেবী সিংহ ও তাঁর ছেলে কাঙ্কুরি। নিজস্ব চিত্র
কোলের মেয়ের মৃত্যুতে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন মা বিনাদেবী সিংহ। কখনও বিছানায়, কখনও ঘরের মেঝেতে কাঁদতে কাঁদতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন তিনি। মার কান্না দেখে কাঁদতে শুরু করে ছোট কাঙ্কুরিও। বীনাদেবী বলেন, ‘‘সোনাক্ষীকে খাওয়ানোর জন্য বোতলে দুধ তৈরি করে রেখেছিলাম। ছাদ থেকে নামলে খাওয়াতাম। মেয়েটাকে দুধ খাওয়াতে পারলাম না। প্রতিদিনই ওর বাবা বাচ্চাদের নিয়ে ছাদে যায়। সেই সময়টুকু আমি ঘরের কাজকর্ম সামলে নিই। কী ভাবে হল বুঝতেই পারছি না।’’ কথাগুলো বলার সময় তাঁর কোলে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন কাঙ্কুরিকে। থম মেরে বসেছিলেন বাবা বীরেন্দ্র সিংহ। পাড়ার খুদের আকস্মিক মৃত্যুকে শোকে ভেঙে পড়েছে গোটা পাড়া। কাঁদতে দেখা যায় অনেক পড়শিকেই।
এ দিন পড়ে যাওয়ার পরে সোনাক্ষীকে নিয়ে দু’টি নার্সিংহোমে গিয়েছিলেন বলে জানান বীরেন্দ্র। প্রতিবেশীদের অনেকই জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় বীরেন্দ্র চিৎকারে ঘুম ভেঙেছিল তাঁদের। ওই পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের সাহায্যে শিশুটিকে প্রথমে বর্ধমান রোডের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলেই জানা গিয়েছে। স্থানীয় এক যুবক জানান, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানায় শিশুটি মারা গিয়েছে। তাই তাকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। পরে শিশুটিকে বর্ধমান রোডেরই অন্য একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেও একই কথা বলা হয়। বীরেন্দ্র বলেন, ‘‘আমি অত আইনকানুন বুঝি না। তাই নার্সিংহোম থেকে যখন বলেছিল মারা গিয়েছে তখন স্থানীয়দের পরামর্শ মত আর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়নি।’’ যদিও পুলিশ খবর পেয়ে বাড়ি এসে শিশুর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠায়।
যে বাড়ির ছাদ থেকে পরে বাচ্চাটি মারা গিয়েছে সেই বাড়িটি দোতলা। ওই বাড়িতেই ভাড়া থাকে বীরেন্দ্র। পেশায় তিনি একটি পোশাকের দোকানের শ্রমিক। ওই বাড়ির সিঁড়ি বা ছাদের চারপাশে কোনও রেলিং নেই। বাড়ির মালিক সিকন্দর পাশোয়ানের বক্তব্য, ‘‘বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। সেই কারণেই রেলিং এখনও লাগান হয়নি।’’ বাড়ির ছাদে কোনও ইটের গাঁথুনিও দেওয়া ছিল না বলেই অভিযোগ। ফলে খোলা ছাদে বাচ্চা হামাগুড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে যাওয়ার ভয় ছিল। স্থানীয়দের বক্তব্য, রেলিংবিহীন সিঁড়ি দিয়ে দুই বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ছাদে উঠতে গিয়েও ঘটতে পারত দুর্ঘটনা।
বাড়ির মালিকের স্ত্রী মিনতি পাশোয়ান বলেন, ‘‘ওদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনও গন্ডগোল ছিল না। কখনও ঝগড়াও শুনিনি। বেশ ভালই ছিল পরিবারটি।’’ প্রতিবেশী অশোক কানু বলেন, ‘‘দুর্ঘটনাই মনে হচ্ছে। বীরেন্দ্র পরিবারের সঙ্গে সবার ভাল সম্পর্ক ছিল। এমন হবে দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।’’
ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলেই জানিয়েছে পুলিশ।