লড়ঝড়ে স্কুলবাস, উদ্বেগ বাড়ছে

ভুরি ভুরি অনিয়ম, অবাক প্রশাসন

ফার্স্ট এড বক্সের ভিতরে দলা পাকানো ন্যাকড়া। ওষুধের শিশির বদলে সর্ষের তেলের ফাঁকা বোতল। বাস চালকের পকেটে পণ্যবাহী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০২:৪৪
Share:

ফার্স্ট এড বক্সের ভিতরে দলা পাকানো ন্যাকড়া। ওষুধের শিশির বদলে সর্ষের তেলের ফাঁকা বোতল। বাস চালকের পকেটে পণ্যবাহী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স।

Advertisement

প্রথম দিনই কয়েকটি স্কুলবাসে অভিযান চালিয়ে এমন ভুরি ভুরি অনিয়ম দেখে চমকে উঠেছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরাই। গত কয়েক দিন স্কুলবাসগুলির জরাজীর্ণ দশা নিয়ে অভিযোগ তুলছিলেন অভিভাবকদের একাংশ। চলতি সপ্তাহেই মদ্যপ অবস্থায় স্কুলবাস চালানোর পরপর দু’বার অভিযোগ ওঠে। শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে আতঙ্ক এবং ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে অভিভাবকদের মধ্যে। তারপরেও কোনও পদক্ষেপ না হওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাসিন্দারা। অভিযোগ পৌঁছয় পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের কাছে। শিলিগুড়িতে চলাচলকারী স্কুলবাসগুলি নিয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান জেলাশাসক। তার পরেই প্রসাসনের টনক নড়ে।

গত বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির দার্জিলিং মোড় লাগোয়া এলাকায় কয়েকটি স্কুল বাসে অভিযান চালিয়েছে পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা। স্কুলবাসের দশা দেখে চোখ কপালে উঠেছে পরিবহণ কর্তাদের। পরিবহণ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে পড়ুয়া নিয়ে ফেরার পথে ২৫টি বাস দাঁড় করিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়। বাসগুলিতে যথাযথ পরিকাঠামো রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হয়। শহরে চারশোরও বেশি স্কুলবাস চলে, তার মধ্যে মাত্র এই ক’টি বাসে অভিযান চালিয়েই একের পর এক অনিয়মের বহর দেখে পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের একাংশই মনে করছেন, এ সবই হিমশৈলের চূড়া মাত্র।

Advertisement

মাটিগাড়ার একটি স্কুলবাসের মধ্যে থাকা ফার্স্ট এড বাক্স খুলে তার ভিতরে দলা পাকানো ন্যাকরা ছাড়া কিছুই পাননি পরিবহণ দফতরের ইন্সপেক্টররা। শিবমন্দির এলাকার একটি স্কুলের ফার্স্ট এড বক্সে সংক্রমণ রোধের ওষুধের শিশির পরিবর্তে সর্ষের তেলের ফাঁকা বোতল পেয়েছে আধিকারিকরা। দার্জিলিং মোড় লাগোয়া একটি স্কুলের বাসে কোনও ফার্স্ট এড বক্সই ছিল না বলে দাবি। মাটিগাড়া এবং দাগাপুরের দু’টি স্কুলের বাসের পেছনের চাকার অবস্থা দেখে চমকে উঠছিলেন পরিদর্শনকারীরা। এক চালক যাত্রীবাহী বাসের লাইসেন্সের পরিবর্তে পণ্যবাহী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দেখিয়েছেন। পরিবহণ দফতরের এক ইন্সপেক্টরের মন্তব্য, ‘‘যা দেখা যাচ্ছে, তাতে অভিযান শুরু হলে তো নব্বই শতাংশের বেশি স্কুলবাসই রাস্তায় চলার যোগ্যতা পূরণ করতে পারবে না।’’

দার্জিলিং জেলার সহ পরিবহণ আধিকারিক (এআরটিও) নবীন অধিকারী বলেন, ‘‘বেশ কিছু বাসের কাগজ জমা রাখা হয়েছে। কয়েক জন চালকের লাইসেন্সও আটকে রাখা হয়েছে। সারা সপ্তাহ ধরেই অভিযান চলবে।’’

এ দিকে, শিলিগুড়ি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রবীন্দ্রনগরে অভিভাবকরা যে স্কুলবাসটিকে আটক করেছিলেন, সেটির কারিগরি ‘দক্ষতা’ যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে বলেও পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাও অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ আমাদের কাছে পৌঁছেছে, সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ শিলিগুড়ির স্কুলবাস মালিকদের সংগঠনের সদস্যরা বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিলেন। সংগঠনের সম্পাদক শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘সব নিয়মাবলি মেনেই যাতে বাস রাস্তায় নামে, তার জন্য সব সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চালকদের উপরেও নজরদারি রাখার কথা বলা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement