—প্রতীকী ছবি।
ছেলেধরা সন্দেহে ফের গণপিটুনি। গত ২৪ ঘণ্টায় এমন দু’টি ঘটনা ঘটছে। প্রথম ঘটনাটি ঘটে শনিবার সন্ধ্যায় চাকুলিয়া থানার রামপুরে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করা হয়। দ্বিতীয় ঘটনাটি চাকুলিয়ার বাংলা বিহার সীমান্ত কিসানগঞ্জের পুঠিয়ার। দুই যুবক কিসানগঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময় বাসিন্দাদের একাংশ ছেলেধরা সন্দেহে আটকে মারধর শুরু করে। দু’টি ঘটনাতেই পুলিশ সময় মতো পৌঁছে গণপিটুনির হাত থেকে আক্রান্তদের রক্ষা করেছে।
ওই দুই যুবক চাকুলিয়ার লাধি গ্রামের বাসিন্দা। কিসানগঞ্জ থেকে গ্রামে ফিরছিলেন। রাত হয়ে যাওয়ায় একটি গ্রামের সড়ক দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময় চাকুলিয়া শেষ সীমানা কিসানগঞ্জের পুঠিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ পথ আটকে ছেলেধরা সন্দেহে তাঁদের মারধর শুরু করে।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ঘটনাস্থল থেকে এক যুবক পালিয়ে গিয়ে একটি নয়ানজুলিতে লুকিয়ে গিয়ে বাড়িতে ফোন করেন। এরপর বাড়ির লোকজন চাকুলিয়া থানায় যোগাযোগ করেন। চাকুলিয়া থানার পুলিশ বিহারের কিসানগঞ্জ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিসানগঞ্জ পুলিশ আটক যুবককে উদ্ধার করে। নয়ানজুলিতে আটকে থাকা ওই যুবককে উদ্ধার করেন চাকুলিয়া থানার ওসি বিশ্বনাথ মিত্র। পুলিশ জানায়, নয়ানজুলি চাকুলিয়া থানা এলাকার মধ্যে পড়ছে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ওই যুবক নয়ানজুলিতে আটকে ছিলেন। তিনি গ্রামের খেত দিয়ে দৌড় দেন। এর পরে একটি নয়ানজুলিতে লুকিয়ে পড়েন। সাহাদাত হোসেন নামে ওই যুবক উদ্ধার হওয়ার পর স্বস্তি ফিরে পান। ওই যুবক পুলিশকে জানায়, ফেরার পথে গ্রামের দু’এক জন পথ আটকে জিজ্ঞেস করতেই কিছু ক্ষণের মধ্যে গ্রামে শুরু হয় ছেলেধরা বলে চিৎকার। পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধারের পর সাহাদাত নামে ওই যুবক বলেন, ‘‘নতুন করে জীবন ফিরে পেলাম।’’
অন্য দিকে, শনিবার রাত ন’টা নাগাদ রামপুর এলাকায় এক মাঝবয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। তখন রাস্তা সুনসান। তাঁকে দেখে সন্দেহ হয় বাসিন্দাদের। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, প্রশ্নের উত্তরে ওই ব্যক্তি কিছু অসলগ্ন কথা বলেন। অভিযোগ, তখনই কয়েক জন ওই ব্যক্তিকে ছেলেধরা বলে দেগে দেয়। অনেকে মারধর করতে উদ্যত হন। তাতে ভয় পেয়ে অন্য বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে ওই ব্যাক্তিকে উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, দু’টি ঘটনাই তদন্ত করা হচ্ছে। কিছু দিন ধরেই জেলার নানা প্রান্তে ছেলেধরা ঘুরে বেড়ানোর গুজব রটিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে সচেতনতা ফেরাতে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ মাইকে প্রচার করছে। লিফলেট বিলি করছে তাও পরিস্থতিতে এই রোগ কিছুতেই কাটছে না। শনিবার ইমামদের নিয়ে গুজব রুখতে বৈঠক করে পুলিশ প্রশাসন।
ইসলামপুর জেলা পুলিশ সুপার সচিন মক্কার বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। আইন মেনে পদক্ষেপ হবে। এলাকায় গুজব রুখতে প্রচার হচ্ছে।’’ বাছাই করা নাগরিক এবং পঞ্চায়েত প্রধানদের ডেকে গুজবের বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন করার আর্জিও জানাচ্ছে পুলিশ।