ভোটই হয়নি এখনও। ফল প্রকাশ তো বহু দূর। তবুও আবিরে রঙিন হল ইসলামপুরের পুর চেয়ারম্যান, কংগ্রেস নেতা কানাইয়ালাল অগ্রবালের লম্বা চওড়া চেহারা।
শুক্রবার রামনবমীর বিকেলে শহরের কলেজ মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে ছিল উৎসবের মেজাজ। ডিজে বক্স বাজিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে একের পর আবিরে ঢাকা শোভাযাত্রা পৌঁছায় বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া মাঠে। রামের নামে উল্লাসে ফেটে পড়ছিলেন শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া মানুষজন। আর ঠিক তার আগের মোড়েই কংগ্রেসের টাউন কমিটির দফতর। সেখানেই রাস্তা দাঁড়িয়ে সকাল থেকে ইসলামপুরবাসীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন কানাইয়ালালবাবু।
কেউ তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছেন, কেউ বা হুডখোলা জিপ থেকে হাত নেড়েছেন। অনেকেই এগিয়ে এসে আবির মাখিয়ে কোলাকুলি করেছেন। এমনকী ছিল সেলফি তোলার উৎসাহও। এই ভাবে দিনভর রামনবমীর গেরুয়া পতাকার ভিড়ে ‘বন্ধু’ খুঁজে নেন কানাইয়ালাল।
কংগ্রেসের ইসলামপুরের প্রার্থী বলছেন, ‘‘অনেক দলই ভোটে লড়ছে। আমার বন্ধুর অভাব নেই। আমিই এ বার মানুষের জোট প্রার্থী।’’ দুপুর গড়াতেই ছোট সাদা গাড়ি নিজে চালিয়েই গ্রামের দিকে ‘নজর’ দিতে রওনা হলেন লোহাপট্টির হলুদ রঙের পরিচিত বাড়ির বাসিন্দা। গাড়ির সামনে স্টিকারে কাস্তে-হাতুড়ির সঙ্গে হাত।
কংগ্রেসের সঙ্গে দর কষাকষির পরে আসনটি নিলেও নিজেরা আর লড়ছে না গতবার দ্বিতীয় স্থানে থাকা কাস্তে-হাতুড়ি। তারা বিহার লাগোয়া এই কেন্দ্রটি তুলে দিয়েছে তির চিহ্ন নিয়ে লড়াই করা জনতা দল ইউনাইটেডের মহম্মদ আরশাদকে। যিনি টোটো, অটো করে ঘুরছেন। সে দিকে অবশ্য স্থানীয় সিপিএম নেতাদের খুব একটা নজর নেই। রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমও বলছেন, ‘‘মানুষ এখানে তৃণমূল প্রার্থীকে হারানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। এতে কোনও সংশয় নেই।’’
তবে সংশয় কিছুটা ছেয়ে রয়েছে অপ্সরা রোড লাগোয়া ইউসুফনগরের এক সময়ের ‘জমিদার বাড়ির’ আনাচে কানাচে। বাড়ি তো শুধু নয়, আমবাগান, পুকুর, সিংহদুয়ার, শ্বেতপাথরের গোলঘর। চারদিকে দাঁড়িয়ে অন্তত পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি। দূরে বাগানের এককোণে পুলিশ ভ্যান। মূল বাড়ির লোহার গেটের ভিতরে ঢোকা বারণ। ছাড়পত্র পেলে তবেই গেটের তালা খোলে। ভিতরে যেতে পারে শুধু বাছাই করা লোকজন। গেটের সামনের বাগানে একাধিক তিনরঙা প্যান্ডেলে চেয়ার পাতা, পানীয় জলের ব্যবস্থা। সেখানেই বসে শ’খানের লোক। বাড়ির মালিক ন’বারের বিধায়ক। রাজ্যে মন্ত্রীও বটে। আবদুল করিম চৌধুরী। এ বারেও তৃণমূলের প্রার্থী।
একটু বেলা করে বাড়ি থেকে বার হওয়ার অভ্যাস নাকি করিম সাহেবের। তাই সব কিছু সকাল থেকে সামলাতে হয় কাউন্সিলর ছেলে মেহেতাবকে। সঙ্গে আর এক ছেলে ইমদাদ চৌধুরী। বিরোধীদের বক্তব্য, করিম চৌধুরীর বয়স হয়েছে। অনেক সময়েই তাঁর দেখা মেলে না। তাঁর ছেলেরাই এখন সব।
করিম সাহেব বললেন, ‘‘সব অপপ্রচার। আমি বাইরে বার হলে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ ভিড় করেন। সবাই হয়তো এক দিনে সুযোগ পান না।’’ এর পরেই ৫৭টি কাজের খতিয়ানের লিফলেট এগিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘কী কাজ করিনি! স্পেশালিটি হাসপাতাল, রাস্তা, উর্দু অ্যাকাডেমি, আইটিআই, পলিটেকনিক, হস্টেল। বলে শেষ করা যাবে না। আর পুরসভা কিচ্ছু না। শহরটাকে পঞ্চায়েত বানিয়েছে। লুঠ করছে। এ বার জিতে পুর এলাকায় সরকারকে দিয়ে কাজ করাব।’’
পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টি কংগ্রেসের। বিজেপি, তৃণমূলের ৩টি করে। এক জন নির্দল। ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে দু’টি সিপিএমের একার। বাকিগুলির বেশির ভাগই কংগ্রেস-তৃণমূলের ‘বন্ধুত্ব’ এখনও রয়েছে। তাতেই উদ্বেগ বাড়ছে জমিদারবাড়ির।