বাবা কোথায়?—উত্তরে নির্বাক পূর্ণিমা

পুরুষশূন্য বোমা-গ্রাম সাইলাপুর

ধৃত কার্তিক ঘোষ, বিবেক মণ্ডল ও বিপ্লব কর্মকারকে এ দিন মালদহের সিজিএমের এজলাসে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। পুলিশ ১১ জনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাইলাপুর শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৮
Share:

আতঙ্কে: সিআইডির বম্ব ডিসপোজ়াল স্কোয়াড নিষ্ক্রিয় করছে বোমাগুলো। নিজস্ব চিত্র

বুধবার বেলা ১২টা। বাড়ির দাওয়ায় গালে হাত দিয়ে বসেছিলেন পূর্ণিমা ঘোষ। রান্না তখনও চড়েনি। পাশেই বসে ছোট দু’টো মেয়ে। বাড়ির কর্তা (স্বামী) কোথায়? ঘুরিয়ে নিলেন মুখ। দুই মেয়েও বাবার কথা জানতে চাইলে নির্বাক হয়ে শুধু তাকিয়ে রইলেন। রত্না ঘোষ, জাহ্নবী ঘোষ থেকে শুরু করে যমুনা মণ্ডল সকলেই একই ভাবে বাড়ির কর্তাদের প্রসঙ্গে নিরুত্তর। মঙ্গলবার দুপুরে বোমা বিস্ফোরণ কাণ্ডের পর থেকে কালিয়াচক থানার সাইলাপুর ঘোষপাড়ার গোটা গ্রামটাই এখন যেন পুরুষ শূন্য।

Advertisement

রাস্তাঘাট প্রায় সুনসান। পুলিশি টহল চলছে। পুলিশ পিকেটও বসেছে গ্রামে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এ দিন সকালেই ঘটনাস্থলে যান ডেপুটি পুলিশ সুপার (সদর) বিপুল মজুমদার। পুলিশ জানিয়েছে, তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত কার্তিক ঘোষ, বিবেক মণ্ডল ও বিপ্লব কর্মকারকে এ দিন মালদহের সিজিএমের এজলাসে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। পুলিশ ১১ জনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই সাইলাপুরের ওই ঘোষপাড়া গ্রামে আমবাগান ঘেরা নির্জন এলাকায় অন্তত ৮ থেকে ১০ জন বোমা বাঁধছিল। প্রথমে একটি বোমা ফাটে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে রাখা অন্তত ১৫-১৬টা বোমা ফেটে যায়। তাতেই দু’জন মারা যান ও ৫ জন জখম হন। জখম প্রসেনজিৎ ঘোষ, চিরঞ্জিৎ ঘোষ ও কমল ঘোষকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এ দিন ভোরে কলকাতার পিজি হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। দীপক ঘোষের চিকিৎসা চলছে মালদহ মেডিক্যালে।

Advertisement

গ্রামে চলছে পুলিশ পিকেট। নিজস্ব চিত্র

পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পরে ঘোষপাড়া গ্রামের সেই ঝোপঝাড় থেকে মোট ১৯৮টা বল বোমা উদ্ধার হয়েছিল। সিআইডির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ শাখা মঙ্গলবার সন্ধেয় ৬৬টা বোমা নিষ্ক্রিয় করে। ডিএসপি (সদর)-এর উপস্থিতিতে দু’দফায় বাকি ১৩২টা বোমা নিষ্ক্রিয় হয়। তাঁরা জানিয়েছেন, দেশি বোমা হলেও সেগুলো খুব শক্তিশালী।

অভিযুক্তদের মধ্যে একজন তৃণমূলের নবনির্বাচিত কালিয়াচক ৩ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যার স্বামী। এ দিন গিয়ে দেখা গেল সেই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যার বাড়ি তালাবন্ধ। ফোনও সুইচড অফ। বাইরে দু’টি তালাবন্ধ সাইকেল পড়ে রয়েছে। ওই সদস্যা বা তাঁর স্বামী কখন বাড়ি ছেড়েছেন, ভয়ে সেটাও বলতে নারাজ আশপাশের বাসিন্দারা।

অভিযোগ, সাইলাপুর সংলগ্ন মহদিপুর আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্রে পার্কিংকে ঘিরে যে গোলমাল চলছে, সেই গোলমালের অন্যতম পাণ্ডা ওই ব্যক্তি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আগে থেকেই একাধিক মামলা রয়েছে। আগে কয়েকবার গ্রেফতারও করা হয়েছিল তাঁকে। পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement