জলপাইগুড়ির পাতাকাটা অঞ্চলে তৃণমূলের প্রচার। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে কোথাও মিছিল আবার কোথাও বা দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ভোট প্রচার। রবিবাসরীয় ভোট প্রচারে জলপাইগুড়িতে শাসক ও বিরোধী দলের এমন প্রচার দেখা গেল। সকাল থেকেই রবিবাসরীয় ভোট প্রচার শুরু হয় জলপাইগুড়িতে। বিকেলেও একই ভাবে চলল প্রচার। সন্ধ্যার পর থেকে জলপাইগুড়িতে গ্রামীণ এলাকায় শাসক ও বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা বৈঠকী সভায় মাতলেন। আট থেকে দশটি বাড়ি নিয়ে ছোট ছোট বৈঠকী সভাতেই এ বারে সব চেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি শাসক বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস ও বামেদের।
রবিবার জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের পাতকাটা, বেলাকোবা, বারোপেটিয়া, পাহাড়পুর, অরবিন্দ, খারিজা বেরুবাড়ি, বাহাদুর ও অন্যান্য গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এ দিন ভোট প্রচার ছিল জমজমাট। জেলার ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, রাজগঞ্জ ও অন্যান্য ব্লকগুলিতেও একই ছবি দেখা গিয়েছে। বামফ্রন্টের প্রার্থীদের সমর্থনে এ দিন জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের করলাভ্যালি চা বাগানে ভোট প্রচার চালান ছাত্র যুবরা। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দেবপ্রসাদ রায়কে সঙ্গে নিয়ে দলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্ত খারিজা বেরুবাড়ি এলাকায় 'জনসংযোগ' কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা চেয়ারম্যান খগেশ্বর রায় বলেন, ‘‘জেলার সর্বত্রই রবিবারের প্রচারে খুব ভাল সাড়া মিলেছে। আগামী ২৭ জুন জেলার ক্রান্তিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভার প্রচারও চালানো হয়েছে এ দিন।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, ‘‘ভোট প্রচারে এবারে ছোট ছোট সভার প্রতি বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক সলিল আচার্য বলেন, ‘‘মাইক ছাড়া প্রচার চালাতেই এ বারে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছি আমরা। ভোটারদের কথা শুনে প্রশ্নোত্তর চলছে প্রচারে। তৃণমূল ও বিজেপিকে হারানোর শক্তি তৈরি হয়েছে জেলায়। মানুষের পঞ্চায়েত গড়ার আবেদন জানিয়েই চলছে প্রচার।’’
এ দিন শিলিগুড়ি সংলগ্ন ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতেও রবিবাসরীয় প্রচারে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন দলের নেতাদের। এ দিন প্রচারে ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও দাপুটে সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। প্রচারে দেখা গিয়েছে স্থানীয় বিজেপির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়কেও। বামেদের সময় মন্ত্রী থাকাকালীন ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির দায়িত্ব অশোকের হাতেই ছিল। বামেদের দাবি, অশোকের আমলেই শহর ঘেষা এই এলাকাটির নবরূপ পেয়েছিল। রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। শিলিগুড়ি পুরসভারও গত বছর হাতছাড়া হয়েছে বামেদের। এই অবস্থায় সিপিএমের এখনও ভরসা সেই অশোক ভট্টাচার্য। পঞ্চায়েত ভোটে জোয়ার আনতে পারবেন কি একসময়ের এই দাপুটে নেতা? প্রশ্ন উঠছে দলের মধ্যেই। অশোকের বক্তব্য, ‘‘আমাদের অনেকেই প্রচার করছেন। আমিও প্রচারে যাচ্ছি। কোনও জায়গায় একাই যেতেও হচ্ছে। ভাল সাড়া মিলছে। স্বুস্থ্য, গণতান্ত্রিক এবং দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত করতে হলে তৃণমূলকে তাড়াতে হবে। তৃণমূল এবং বিজেপি দুটোই এক।মানুষের পঞ্চায়েত করতে সিপিএম তাই বিকল্প।’’
ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় ডাবগ্রাম-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রচার করে জলপাইগুড়িতে জেলা কমিটির মিটংয়ে গিয়েছেন বলে জানান। শিখার বক্তব্য, ‘‘বামেরা এখন তৃণমূলের সঙ্গে জোটে মুখ লুকোচ্ছে। দিল্লিতে দোস্তি আর রাজ্যে কুস্তি মানুষ মানবেন না। অশোকবাবুরা অতীত ভুলে যান।’’ এ দিন তৃণমূল প্রার্থীদের ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতেই প্রচারে দেখা গিয়েছে। ফুলবাড়ি এক পঞ্চায়েতের দলীয় প্রার্থী, নেতাদের নিয়ে সন্ধ্যায় আলোচনায় বসেছেনশিলিগুড়ি মেয়র গৌতম দেব।