অজয় এডওয়ার্ড এবং অনীত থাপা। —ফাইল চিত্র।
আবারও অনীত-অজয় জুটি দেখলেন পাহাড়বাসী। অজয় এডওয়ার্ডের অনুরোধে এ দিন দার্জিলিঙে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর বিশেষ সভা ডাকা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ে নতুন করে কোনও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির অনুমতি দেওয়া হবে না। গত ৪ অক্টোবরের তিস্তার জলস্ফীতিতে কালিম্পং জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জিটিএ সভায় তাকে ‘বিপর্যয়’ বলে চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে।
অজয় এবং জিটিএ-র বাকি সদস্যদের দাবি, পাহাড়ের রম্ভি, কালীঝোরায় দু’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনএইচপিসি-র মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে ৩০০ কোটি করে ৬০০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বাবদ আয়ের টাকা জমা পড়ছে। কিন্তু তা পাহাড়ের জন্য খরচ হচ্ছে না। উল্টে, পাহাড় কেটে, নদীপথের কাজ করে পরিস্থিতি বিপজ্জনক করে তোলা হয়েছে। দাবি, সিকিমে সংস্থাটি পুনর্বাসনে আর্থিক সাহায্য করলেও, এ রাজ্যে করেনি।
জিটিএ প্রধান অনীত থাপা বলেন, ‘‘আমরা শাসক-বিরোধী মিলিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দার্জিলিং বা কালিম্পং পাহাড়ে নতুন করে কোনও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে না। জিটিএ অনুমতি দেবে না। সাম্প্রতিক ঘটনার পরে দু’টি কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।’’ অনীতের বক্তব্য, রাজনীতি নয়, বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে যা করণীয়, তাই করা হচ্ছে। রাজ্যের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য দেওয়া পরিকল্পিত খাতের ২৫ কোটি টাকা দুর্যোগ-বিধ্বস্ত এলাকার জন্য খরচ করা শুরু হবে বলে অনীত জানান।
সূত্রের খবর, সভায় জিটিএ এলাকার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এই কমিটি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কাছে দরবার করবে। জিটিএ সদস্য তথা হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড সভায় প্রস্তাব দেন, উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে দল না ভেবে বিজেপি সাংসদ এবং দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার কালিম্পঙের বিধায়ক সবাইকেই রাখা হোক। অজয় বলেন, ‘‘টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দেখে কেন্দ্র ও রাজ্যকে সাহায্যের জন্য বলতে হবে। এনএইচপিসি এবং রেলের প্রকল্প পাহাড়ে রয়েছে। তাদেরও অনুদানের হাত বাড়াতে হবে। সেখানে কেন্দ্রের সঙ্গে সাংসদ ও বিধায়কেরা কথা বলবেন। এখানে রাজনীতির কোনও বিষয় থাকবে না।’’
সিকিম থেকে কালিম্পং বা দার্জিলিং পাহাড়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে গত কয়েক দশক ধরেই বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি রয়েছে। পরিবেশবিদেরা মনে করছেন, পাহাড়ে জঙ্গল কাটার জেরে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের ক্ষতি হয়েছে। তেমনই তিস্তার জলপ্রবাহ বদল করে বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় ভূমিকম্প বা হড়পা বানের মতো ঘটনায় বিপত্তির আশঙ্কা রয়েছে। পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ‘ন্যাফ’-এর মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘যা হয়েছে, তাতেই বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। নতুন প্রকল্পের কথা ভাবার প্রশ্নই নেই। জিটিএ ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’