দাগাপুর

বিক্ষোভ, পুলিশ ভ্যানে বাগান ত্যাগ ম্যানেজারের

কংগ্রেস প্রভাবিত চা শ্রমিক সংগঠন এনইউপিডব্লুউ-র সদস্যদের বিক্ষোভের জেরে পুলিশের ভ্যানে চেপে বাগান ছাড়তে বাধ্য হলেন ম্যানেজার। বুধবার শিলিগুড়ির উপকন্ঠে তরাই-র দাগাপুর চা বাগানে ঘটনাটি ঘটেছে।

Advertisement

নিজস্ব স‌ংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৭
Share:

কংগ্রেস প্রভাবিত চা শ্রমিক সংগঠন এনইউপিডব্লুউ-র সদস্যদের বিক্ষোভের জেরে পুলিশের ভ্যানে চেপে বাগান ছাড়তে বাধ্য হলেন ম্যানেজার। বুধবার শিলিগুড়ির উপকন্ঠে তরাই-র দাগাপুর চা বাগানে ঘটনাটি ঘটেছে।

Advertisement

১৫ অগস্টের অনুষ্ঠানকে ঘিরে গোলমাল, অশালীন ব্যবহারের অভিযোগে এক শ্রমিক নেতাকে শোকজের সিদ্ধান্ত নেন বাগান কর্তৃপক্ষ। এদিন সকালে তাঁকে বাগানের দফতরে ডেকে পাঠানো হয়। সকাল ৮টা নাগাদ কয়েকশো শ্রমিক নিয়ে দফতরে এসে ম্যানেজারকে ঘেরাও করেন। অশ্রাব্য গালিগালাজ ছাড়াও ম্যানেজারকে বাগান থেকে টেনে বার কয়েকবার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ, সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বাগানে গিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন।

প্রায় পাঁচ ঘন্টা ঘেরাও বিক্ষোভ চলে। শেষে পুলিশকে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়ে ম্যানেজার বাগান থেকে বার হতে সাহায্য করার আবেদন জানান। বার হওয়ার সময় ম্যানেজারকে মারার জন্য তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন একাংশ শ্রমিক। পুলিশ ও নেতারা তাঁদের কোনও মত আটকান। বাগান অবশ্য রাত অবধি বন্ধ করেননি কতৃর্পক্ষ। কারখানায় এদিনও কাজ হয়েছে। পাতা তোলা বন্ধ ছিল। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেন, ‘‘বাগান পরিস্থিতি খারাপ ছিল। কতৃর্পক্ষ লিখিতভাবে পুলিশি সাহায্য চেয়েছিল।’’

Advertisement

শ্রমিকদের অভিযোগ, বিক্রমদীপ সিংহ সেখুন নামের ম্যানেজার পাঁচ বছর আগে বাগানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অনৈতিক কাজকর্ম শুরু হয়েছে। মদ্যপ অবস্থায় গালিগালাজ, মারধর, রিভলবার দেখিয়ে ভয় দেখান। জাতীয় সড়ক লাগোয়া বাগানের জমি টাকার বিনিময়ে বেদখল হচ্ছে। ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মহিলা সংক্রান্ত নানা অভিযোগ ছিল। ১৫ অগস্ট বাগানের ছেলেমেয়েদের কর্তৃপক্ষ বরাবর লাড্ডু, ঝুরিভাজার প্যাকেট দেয়। এবার ম্যানেজার তা বন্ধ করে দিয়ে চলকেট দেন। তা কেন বলায় মুচিয়া সহায় নামের তিনি অপমান করেন। লকআউটের হুমকি দেন। আইএনটিইউসি-র রাজ্য কমিটির কার্যকরী সভাপতি অলোক চক্রবর্তীও বাগানে যান। তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা কাউকে মারধর, অপমান করেননি। মালিকপক্ষ নয়, ম্যানেজারের বিরুদ্ধেই শ্রমিকদের নানা অভিযোগ। উনি বাগান থেকে না গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত।’’

ম্যানেজারের অবশ্য দাবি, ‘‘কয়েকজন নেতা শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়েছে। নিয়মিত কাজে না করা, জমির ব্যবসা, হাজিরার টাকায় গোলমাল-মত নানা বিষয় বন্ধ করা হয়েছে। সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ করে আমাদের বাগান ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। বাগানে থাকলে প্রাণে হয়ত মেরে দিত।’’ দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার জন্য বাগানে গিয়েছিলেন মালিক সংগঠন ‘টাই’-এর তরাইয়ের সেক্রেটারি সুমিত ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ থাকলে কতৃর্পক্ষ, আইন পুলিশ রয়েছে। তা না করে এভাবে ম্যানেজারকে জোর করে বাগান থেকে বার করাটা অন্যায়। পাহাড়গুমিয়া চা বাগানেও এমন হয়েছিল। এই প্রবণতা চলতে থাকলে তো মালিকেরা নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক কিছুই ভাবতে বাধ্য হবেন।’’

৫০ দশকের এই বাগানের মোট এলাকায় প্রায় ৫১০ হেক্টর। গাছ নেই এমন ৭২ হেক্টর এলাকা দখল হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে ৬০০ শ্রমিক বাগান রয়েছে। প্রায় ৪ লক্ষ কেজি হলেও গতবছর আড়াই লক্ষ কেজি চা পাতা বাগানে উৎপাদন হয়েছে। বাগানে সিটু এবং আদিবাসী বিকাশ পরিষদের ইউনিটও রয়েছে। সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে ঘটনার নিন্দা করে জানানো হয়েছে, পুজোর মুখে বোনাস চুক্তি হবে। এই সময় মালিকপক্ষের সঙ্গে গোলমাল করলে আখেরে শ্রমিকদেরই সমস্যা হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement