নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে গাড়ি ঢুকলেই জোর করে ২০ টাকা করে আদায় চলছে বলে অভিযোগ অব্যাহত। রবিবারও এ ভাবেই যত গাড়ি ঢুকেছে, বাধ্যতামূলক হিসেবে এই টাকা তোলা হয়েছে। যদিও রেলের পক্ষ থেকে পার্কিং নিয়ে টেন্ডার দেওয়ার ক্ষেত্রে কী নির্দেশিকা রয়েছে, তা জানাতে পারেননি রেল আধিকারিকরা। ফলে ক্ষোভ বাড়ছেই।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন চত্বরে দিনের পর দিন এমন ঘটনা ঘটায় গোটা উত্তরবঙ্গের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। পর্যটন ব্যবসায়ী, বণিক সংগঠন থেকে সাধারণ নাগরিকেরাও দ্রুত সরকারি স্তরে হস্তক্ষেপ চাইছেন। দীর্ঘ দিন এমন চললে পর্যটন মার খাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। অনেকেই নিজস্ব সংগঠনের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে রেল ও সরকারি স্তরে দরবার করার কথা ভাবছেন। ইতিমধ্যেই পদক্ষেপও করা হয়েছে কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে।
যদিও এ বিষয় নিয়ে আপাতত গা বাঁচিয়ে চলার নীতি নিয়েছেন, সারা বছর নিউ জলপাইগুড়ি চত্বরের দখল যাঁদের হাতে থাকে সেই নেতারাও। ফলে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। তৃণমূল নেতা এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর জয়দীপ নন্দীকে বিষয়টি দু’দিন আগেই জানানো হয়। তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান। এ দিন পর্যন্ত তিনি কারও সঙ্গে কথা বলে উঠতে পারেননি। তিনি জানান বাইরে আছেন, ফিরে কথা বলবেন। এলাকার সদ্য বরখাস্ত আইএনটিটিইউসির ইউনিট সভাপতি প্রসেনজিৎ রায় বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতেই চাননি। তবে স্থানীয় এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা জানান, এলাকায় ইউনিয়ন না থাকার সুযোগ নিয়ে কিছু লোক এই কাজ করছে।
এ দিন পর্যন্ত রেলের নির্দেশিকায় কী আছে, তা জানাতে পারেননি এনজেপির এরিয়া ম্যানেজার পার্থ শীল। তবে রেল কর্তৃপক্ষের মনোভাব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিত দাসও। তিনি জানান, দশ বছর আগে এভাবেই এনজেপি স্টেশন চত্বরে জোর করে অবৈধ পার্কিং ফি আদায় করা হচ্ছিল। রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে তাঁদের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়েছিল। পরে তা মিটে যায়। এটা ফের শুরু হলে তা বরদাস্ত করা হবে না বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দ্রুত নির্দেশিকার কপি চেয়ে রেলকে সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠি দেব। পরিষ্কার করে জানাতে হবে, কী নির্দেশিকা রয়েছে। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা মানব না।’’ অপর একটি ব্যবসায়িক সংগঠন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি বা সিআইআইয়ের তরফেও এরিয়া ম্যানেজারের সঙ্গে দ্রুত বৈঠক করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে নির্দিষ্ট তারিখ পেলেই বৈঠক হবে বলে জানানো হয়েছে।
কিছু দিন আগেই গাড়ি নিয়ে নিজের আত্মীয়কে শুধু স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে ফিরে আসার সময় জোর করে পার্কিং ফি চাওয়া হয় শিলিগুড়ির আইনজীবী রতন বণিকের কাছ থেকেও। তিনি আবার বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের সম্পাদকও। তিনি বলেন, ‘‘এটা একটা বড় সমস্যা। গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বার হলে কখনও পার্কিং ফি দিতে হতে পারে না।’’ তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের ভাবমূর্তিতে কালি ছিটোচ্ছে। এ নিয়ে সংগঠনে আলোচনা করে পদক্ষেপ করার দাবি জানাব।’’
পর্যটন সংগঠনগুলির সংগঠন ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল জানান, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন। অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজার্ভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের কর্ণধার রাজ বসুর দাবি, ‘‘সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি তো হচ্ছেই, সঙ্গে প্রচুর বাইরের পর্যটকের কাছেও এনজেপি স্টেশনের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হচ্ছে।’’