আন্দোলনের নামে বন্দুকের মুখে পুরকর্মীদের বেতন বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।
মঙ্গলবার পুর ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা বলে ফের বিতর্কের মুখে পড়েছেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘‘আন্দোলনের নামে আমাকে বন্দুকের মুখে রেখে চাপ দিয়ে ইচ্ছে মতো পুরকর্মীদের মাইনে বাড়ানো যাবে না। মারে মারুক। আত্মসমর্পণ করব না। আমরা কর্মীদের বিষয়ে সহানুভূতিশীল। সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই এগোব।’’
মেয়র এ কথা বলার পরেই তৃণমূল ও কংগ্রেস পৃথক ভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। কংগ্রেসের কাউন্সিলর তথা পুর পরিষদীয় দলনেতা সুজয় ঘটক বলেন, ‘‘মেয়র পুরভবনে বসে এ ধরনের বন্দুক ঠেকানোর কথা বললেন কী করে! কে ওঁকে বন্দুক ঠেকিয়েছে? পুরসভার বিরোধী কাউন্সিলররা যদি কর্মীদের জন্য কোনও দাবি করেন, সেটাকে বন্দুক ঠেকানো বলা যায়? কর্মীদের নায্য দাবি অগ্রাহ্য করতেই পারেন উনি। তা বলে বন্দুক ঠেকানোর অন্যায় অভিযোগ মানা যায় না। এ জন্য কর্মীদের কাছে মেয়রের ক্ষমা চাইতে হবে।’’
মেয়রের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস-বিজেপিও। পুরসভায় তৃণমূলের বিরোধী দলনেতা রঞ্জন সরকার জানান, পুরকর্মীদের মাইনে বাড়ানোর আর্জি শুনে বন্দুক ঠেকানোর প্রসঙ্গ তোলাতেই স্পষ্ট ওঁর মানসিকতা কেমন। রঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘এমন একজন মানুষ আমাদের শহরের মেয়র, যিনি আগের দিন কর্মীদের দাবি মেনে সকলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে মাইনে বাড়ানো হবে বলে জানান। পরদিন সেই প্রসঙ্গকে বন্দুক ঠেকানোর সঙ্গে তুলনা করেন। এ তো অসাংবিধানিক কথা। পুরকর্মীদের অপমান করার পরে, ওঁর আর এক মুহূর্ত ওই পদে থাকার অধিকার আছে বলে আমরা মনে করি না।’’
সোমবার বোর্ড মিটিঙে মেয়র পুরসভার অস্থায়ী শ্রমিক-কর্মীদের দৈনিক ১০/১৫ টাকা বেতন বৃদ্ধির যে প্রস্তাব নিয়েছিলেন, তা মেনে নেননি বিরোধীরা। কংগ্রেস কাউন্সিলররা সভায় না থাকলেও তাঁরাও সমর্থন করেননি। আইএনটিটিইউসি এবং আইএনটিইউসি-র কর্মী সংগঠনও সভাকক্ষের বাইরে, তা নিয়ে আন্দোলনে নামে। চাপের মুখে এক সদস্য কমিটির মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহার করেন মেয়র। বোর্ড মিটিংয়েই ঠিক হয় কর্মী ইউনিয়নগুলি এবং বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়ে মেয়র দিনের শেষে জানা, তিনি কাউকে আঘাত দেওয়ার জন্য বন্দুক ঠেকানোর কথা বলেননি। তাঁর দাবি, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বোর্ড মিটিংয়ে আন্দোলনের নামে চাপ দেওয়া হয়েছে। তাই ও কথা বলেছি। আমরা কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে সহানূভূতিশীল।’’