বহরমপুরের ভয়াবহ স্মৃতি এখনও ফিকে হয়নি। তার আগেই আগুন থেকে আতঙ্ক ছড়াল মালদহের গাজোল হাসপাতালে। শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ গাজোল গ্রামীণ হাসপাতালের রান্নাঘরে আগুন লাগে। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা শিখা দেখে পড়িমরি করে বেরিয়ে আসেন রোগীরা। পরে স্থানীয়রাই বালি এবং জল ছিটিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। তবে এই ঘটনা ফের হাসপাতালগুলিতে অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
এ দিন সকালে হাসপাতালের রান্নাঘরে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা রান্না করছিলেন। হঠাৎই আগুন লাগে। রান্নাঘরে আগুন জ্বলতে থাকায় পাশেই থাকা মহিলাদের সাধারণ ওয়ার্ড ও শিশু বিভাগের রোগী এবং পরিজনদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায়। রোগীরা হুড়মুড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। বেশ কিছু রোগী আবার হাতে স্যালাইন নিয়েও বাইরে বেরিয়ে আসেন। ওই রোগীদের চিৎকারে কাছেই আইসোলেশন ওয়ার্ড ও পুরুষ বিভাগ থেকেও রোগীরা বাইরে বেরিয়ে পড়েন। সব মিলিয়ে সে সময় হাসপাতালে হুলুস্থূল বেধে যায়। পরে অবশ্য হাসপাতালে থাকা রোগীদের পরিজন, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারাই বালি এবং জল ছিটিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ধারণা, রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের পাইপ লিক হয়েই এই বিপত্তি। জানা গিয়েছে, গ্যাস সিলিন্ডারটি বাইরে বের করতে গিয়ে ভবানন্দ সরকার নামে এক রোগীর আত্মীয় সামান্য জখমও হয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালেই প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনা হল, এ দিনই মালদহ মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অগ্নিকাণ্ডের মহড়া হয়। সে দিনই জেলারই অন্য একটি হাসপাতালের ভিতরে রান্নাঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অভিযোগ, হাসপাতালের ভবনে রান্না করার কথা নয়। কিন্তু দিনের পর দিন যে সেখানে রান্না করা হচ্ছে তাই নয়, বাড়ির ব্যবহার্য সিলিন্ডার দিয়েই রান্না চলছিল। আতঙ্কিত রোগীদের ক্ষোভ, ‘‘রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারটি ফেটে গেল ভয়াবহ কাণ্ড ঘটে যেত।’’ হাসপাতালের মহিলা বিভাগে ভরতি ছিলেন বাবুপুরের বাসিন্দা আমাতো মার্ডি। তিনি বলেন, ‘‘ জীবন বাঁচাতে ওয়ার্ড ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ি।’’ তিন বছরের মেয়ে রাধাকে নিয়ে শিশু বিভাগে ভরতি ছিলেন পাণ্ডুয়ার আকলিমা বিবি। তাঁর কথায়, ‘‘আগুন নিভলেও আতঙ্ক কাটছে না।’’
অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘যে ঘরে আগুন লেগেছিল সেটি রান্নাঘর নয়। বাইরে থেকে রান্না করা খাবার এনে সেখানে রেখে ওয়ার্ডের রোগীদের মধ্যে বিলি করার কথা। কিন্তু সেখানে কেন রান্না করা হচ্ছিল তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ গৃহস্থালীর গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘হাসপাতালে রোগীদের খাবার দেয় একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী। তারা যদি গৃহস্থালীর গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে তার দায় তাদেরই।’’