তদারকি: মিরিকে মন্ত্রী অরূপ। নিজস্ব চিত্র
পাহাড়ের আকাশ এখন আংশিক মেঘলা। মেঘের রাজ্য দার্জিলিঙে কালো পতাকা আর মিছিল। ঠিক এই সময়ে মিরিক যেন অনেক বেশি ঝকঝকে।
শিলিগুড়ির খাপরাইল মোড় থেকে গাড়িধুরা হয়ে মিরিক পৌঁছনোর রাস্তার দুধারে উপচে পড়ছে ঘাসফুল। আজ, ওই পথে ক্লাস সেভেনের পুঁচকে প্রিয়ঙ্কা রাই কিংবা সোয়েটার বিক্রেতা প্রেমা তামাঙ্গরা দুপুর থেকে দাঁড়িয়ে থাকবেন তাঁকে অভ্যর্থনার জন্য। আর শয়ে শয়ে খাদার পাহাড় পেরিয়ে তিনি বিকেলে পৌঁছবেন প্রত্যাশার পাহাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মিরিকে। তৃণমূলের পাহাড়ে প্রথম জয়ের পরে প্রথম বারের জন্য সেখানে পা রাখবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে রবিবারই মিরিকে এসে গিয়েছেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। যে ভাবে বাড়ি-বাড়ি তৃণমূলের পতাকা টাঙানোর হিড়িক, তাতে এখানে অন্তত কালো পতাকা ঝুলিয়ে প্রতিবাদের কোনও চেষ্টা এখনও নজরে পড়েনি।
মিরিকের অনেকেই মনে করেন, এখন এটা সম্ভব নয়। কারণ, মিরিক এখন নানা উন্নয়ন প্রকল্পের স্বপ্নে বিভোর। তৃণমূল পরিচালিত মিরিক পুরসভার চেয়ারম্যান লালবাহাদুর রাইকে গিয়ে অনেকে জানিয়েছেন, তাড়াতাড়ি লেক সংস্কার করে আন্তর্জাতিক মানের করা হোক। দ্রুত ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ থেকে ‘সফ্টওয়্যার হাব’-এর দাবিও জানিয়েছেন অনেকে। মিরিকের গাড়িধুরায় রয়েছে সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এ বার মিরিকেই পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার গড়ার অনুরোধ করেছেন অনেকে। ভাইস চেয়ারম্যান মণিকুমার তামাঙ্গ (জিম্বা) বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী অসংখ্যবার পাহাড়ে এসেছেন। পাহাড়বাসীর কী দরকার, তা ওঁর চেয়ে কেউ ভাল বোঝেন না।’’
রাজ্যসভার প্রার্থী হিসেবে যাঁকে তৃণমূল মনোনীত করেছে, সেই শান্তা ছেত্রীর কথায়, ‘‘আসলে তৃণমূলকে বাংলার পার্টি বলে পাহাড় থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছিল মোর্চা। কিন্তু, পাহাড়ের চার পুরসভার ফলে স্পষ্ট যে, পাহাড়বাসী তৃণমূলকে জাতীয় দল হিসেবেই দেখছেন। বিজেপি ও তার সহযোগী মোর্চার কাজে বিরক্ত ওই মানুষজন এখন তৃণমূলকেই ক্রমশ আপন করছেন।’’
মোর্চা নেতাদের অনেকেই কিছুটা দোনোমোনার মধ্যে রয়েছেন। কারও মতে, ভাষার অধিকারের আন্দোলনকে সামনে রেখে ফের জনমত কব্জা করা যাবে। আবার অনেকেরই ভাবনা, গত পুরভোটে গোর্খাল্যান্ড বনাম বাংলা স্লোগান সত্ত্বেও তৃণমূল ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলেছে। এ বার নানা প্রকল্পে মিরিক দ্রুত বদলে গেলে জিটিএ ভোটে তার কতটা প্রভাব পড়বে, তা নিয়েও চিন্তা বাড়ছে।