বাগানে পরিষেবা দিতে গিয়ে নানা অভিযোগ শুনেছিলেন প্রশাসনের কর্তারা। ‘আপনার বাগানে প্রশাসন’ কর্মসূচি থেকে পাওয়া সেই সব দাবিদাওয়া মেটাতেই চা বলয়ে পানীয় জল সরবরাহ ও রাস্তা সংস্কারে একঝাঁক পরিকল্পনা নিল প্রশাসন। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনের আগে ডুয়ার্সের চা বলয়ে শাসক দলের মাটি শক্ত করতেই এত ‘তৎপরতা’৷
মাস ক’য়েক আগে আলিপুরদুয়ার জেলার চা বলয়ে ‘আপনার বাগানে প্রশাসন’ কর্মসূচি চালু করে প্রশাসন৷ এই কর্মসূচিতে চা বলয়ের বাসিন্দারা বাগান থেকেই সরকারি বিভিন্ন পরিষেবা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের কর্তাদের কাছে এলাকার নানা সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন৷ ইতিমধ্যেই জেলার ৬৩টি চা বাগানের মধ্যে ৩২টিতে এই কর্মসূচি হয়ে গিয়েছে৷ কিছুদিন আগে চালসার কাছে টিয়াবনে প্রশাসনিক সভায় এই কর্মসূচি নিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের কর্তারা খোদ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাও কুড়োন৷
বাগানে গিয়ে প্রশাসনের কর্তারা শুনেছেন, চা বলয় এলাকায় পানীয় জল একটা বড় সমস্যা৷ প্রচুর মানুষকে সামান্য পানীয় জলের জন্য দূর-দূরান্তে ছুটতে হয়৷ তাছাড়া বহু জায়গায় রাস্তাঘাট বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকার কারণেও মানুষকে প্রচণ্ড অসুবিধেয় পড়তে হয়৷ এ ছাড়া সরকারি ঘর বা আর্থিক বিভিন্ন ভাতা নিয়েও সমস্যা রয়েছে৷
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ৯ হাজার ৮৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে৷ যার বেশিরভাগই পানীয় জল, বেহাল রাস্তা নিয়ে৷ এ ছাড়াও আবাস যোজনা বা সরকারি ভাতা নিয়েও অনেকেই অভিযোগ করেছেন৷’’
এই অবস্থায় চা বলয়ের এই সমস্যাগুলি দূর করতে দ্রুত ঝাঁপাতে চাইছে প্রশাসন৷ এ জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে পরিকল্পনা করতেও বলা হয়েছে৷ এর মধ্যে বেশ কিছু প্রস্তাব ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের কাছেও পৌঁছেছে৷ যার মধ্যে কালচিনি, কুমারগ্রাম ও মাদারিহাট-বীরপাড়া থেকে পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের প্রস্তাবই রয়েছে ২৩টি৷ এ ছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা সংস্কারের প্রস্তাবও আলোচনায় উঠে এসেছে৷ জেলাশাসক নিখিল নির্মল বলেন, “সব প্রস্তাবই আমরা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে পাঠাব৷”
তবে বিরোধীরা অবশ্য এই তৎপরতাকে কটাক্ষ করেছে। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত রায় বলেন, ‘‘এটাই আশ্চর্যের যে, এতদিন চা বলয়ের মানুষের কথা কেউ ভাবলেন না৷ আর লোকসভা নির্বাচন কাছে আসতেই সেখানকার মানুষের জন্য সবার চিন্তা বেড়ে গেল৷ আসলে জেলার চা বলয় ইতিমধ্যেই তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে৷ তাই এত কিছু আয়োজন৷’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মার পাল্টা মন্তব্য, ‘‘চা বলয়ের মানুষ আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন৷ বিজেপি নেতারা বরং ঘর আগে সামলান৷ কারণ ওঁদের শীর্ষ নেতাদের এলাকা থেকেও সবাই আমাদের দলে আসছেন৷’’