বেঙ্গল সাফারি পার্ক। — নিজস্ব চিত্র
নাম রুস্তম। আর পাঁচটা বুনো জন্তু যখন পার্কের ঘেরাটোপ থেকে মুক্তি চায়, সে সময়ে রুস্তম রোজই স্বেচ্ছায় সেখানে ঢুকতে চায়। উচ্চতা ফুট ছয়েক। বয়স খুব বেশি হলে বছর দশেক। দুটি সাদা দাঁতও গজিয়েছে। নিঃশব্দে গাছের আড়ালে লুকনো আর ঘোরাফেরায় অত্যন্ত পারদর্শী। হাঁকডাক প্রায় নেই।
এই মাকনার দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ বেঙ্গল সাফারি পার্কের লোকজন। তার দৈনিক মস্তানির চেষ্টা দেখে বনকর্মীরা অনেকে ‘রুস্তম’ বলে ডাকছেন মাকনাটিকে।
বনকর্মীরা জানান, সপ্তাহ দেড়েক আগে এক ভোরে ভালুক রাখার জন্য নির্মীয়মাণ এনক্লোজারের একাংশের গেট ভেঙে দিনভর সাফারি পার্কে ছিল রুস্তম। বনকর্মীদের নজরদারির মধ্যে হাতের সামনে থাকা ঘাস, গাছের কচি ডালপালা খেয়ে নেয় সে। সন্ধের পরে সেটিকে তাড়িয়ে জঙ্গলে ঢোকানো হয়। কিছু দিন আগে এক রাতে বনকর্মীদের আবাসনের পিছন দিয়ে এসে গাছের নীচের অংশ থেকে গোটা পাঁচেক কাঁঠাল সাবাড় করে সরে পড়ে। তবে বন ও পুলিশকর্মীদের কাঠের বাড়ি, গাড়ি থাকলেও কোনও ক্ষতি করেনি মাকনাটি। জ্যোৎস্নার আলোয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বনকর্মীরা দূর থেকে তা লক্ষ্যও করেন।
সাফারি পার্কের কয়েক জন কর্মী জানান, জংলিরা যখন খাঁচা থেকে বাইরে যেতে চায়, রুস্তম তখন বারেবারেই পার্কের ভিতরে ঢুকতে চায়। পার্ককে হয়তো তার খাবার বা আশ্রয়ের জন্য নিরাপদ এলাকাই মনে হচ্ছে। কিন্তু মাকনা রাখলে সমস্যা হতে পারে ভেবে এগোচ্ছেন না বনকর্মীরা। পার্কের নির্মাণ বিভাগের বাস্তুকার উত্তম সাহা জানান, কখন আসবে কোনও ঠিক নেই। নজরদারি তাই নিয়ম মতো রাখতে হয়।
বন দফতর সূত্রের খবর, ২৯৭ হেক্টর সাফারি পার্কের পিছনের মহানন্দা অভয়ারণ্য এবং বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল। গুলমার জঙ্গল থেকে সাত-আট মাইল এলাকা ঘন জঙ্গল। ৩-৪টি দল নিয়মিত এলাকায় ঘোরাফেরা করে। গুলমা, খৈরানি, পুন্ডিংবস্তি, লালটংবস্তির পাশের ধান খেত, কলা বাগান, সুপারি খেতে ঘোরে দলগুলি। দলগুলি ক’দিন ধরে নদী, ঝোরা ঘেরা গুলমা-টাপুতে রয়েছে। দার্জিলিঙের ডিএফও (বন্যপ্রাণ-১) ধর্মদেও রাই বলেন, ‘‘এলাকায় প্রচুর হাতির দল থাকে। পার্কের ধারেকাছে একটা মাকনাও রয়েছে শুনিছি। সাফারি পার্কের প্রশিক্ষিত নিরাপত্তারক্ষীরা সেটির উপর নজর রাখছে।’’ পার্কের নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, সন্ধের পর প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে বৈদ্যুতিক ফেন্সিং সচল থাকছে। পার্কের পিছনের অংশে তীব্র আলোর লাইটও জ্বালিয়ে রাখা হচ্ছে।