পারিবারিক বিবাদের জেরে এক মহিলা তাঁর জা-এর গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মেরেছেন, এই অভিযোগে পুলিশ খুনের মামলা দায়ের করেছিল। কিন্তু তদন্তকারী অফিসার কোনও প্রামাণ্য নথি দাখিল করতে না পারায় মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট ওই মহিলাকে আগাম জামিন দিল।
পুলিশ জানায়, কালিয়াচকের মধুঘাট গ্রামের বাসিন্দা বাসন্তী মণ্ডল চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল অগ্নিদগ্ধ হন। প্রথমে সুজাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, পরে মালদহ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বাসন্তীদেবীকে। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ২১ দিন পরে ওই বধূ মারা যান। তাঁর স্বামী গত ৪ মে কালিয়াচক থানায় তাঁর ভাই কিনু মণ্ডল ও ভাইয়ের স্ত্রী মমতাদেবীর বিরুদ্ধে এফআইআর করে জানান, পারিবারিক বিবাদের জেরে তাঁর স্ত্রীকে মারধর করে গায়ে আগুন লাগিয়ে মারা হয়েছে। কিনুকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও, পরে নিম্ন আদালত তাঁকে জামিন দেয়।
তদন্তকারী অফিসার মমতাদেবীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করায় সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান তিনি। এ দিন হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া ও বিচারপতি অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের আদালতে মামলার তৃতীয় দফার শুনানি ছিল।
মমতাদেবীর আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল আদালতে জানান, তদন্তকারী অফিসার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং চিকিৎসার নথি পেশ করলেই বোঝা যাবে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তাঁর মক্কেলকে।
সরকারি কৌঁসুলি ওই নথি পেশ করলে কল্লোলবাবু জানান, বাসন্তীদেবী অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ২১ দিনের মধ্যেও তদন্তকারী অফিসার তাঁর মৃত্যুকালীন জবানবন্দি নথিভুক্ত করেননি। চিকিৎসকদের জবানবন্দিও নথিভুক্ত হয়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও জানানো হয়েছে, ওই মহিলা আত্মঘাতী হন।
আইনজীবী কল্লোলবাবু আদালতে আরও জানান, মৃতার স্বামী রাজু মণ্ডলের অভিযোগ পেয়ে তদন্তকারী অফিসার তাঁর প্রতিবেশীদের বক্তব্য নথিভুক্ত করেন। তাঁরা সকলেই জানান, রাজুর মুখে তাঁরা ঘটনাটি শুনেছেন। এমনকী, রাজুও লিখিত অভিযোগে জানান, তাঁর স্ত্রী যখন অগ্নিদগ্ধ হন, সেই সময় তিনি বাড়ি ছিলেন না।
সরকারি কৌঁসুলি এ দিন অভিযুক্তের আগাম জামিনের বিরোধিতা করেননি। বিচারপতি পাথেরিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ সব নথি দেখে মমতাদেবীর আগাম জামিন মঞ্জুর করে।