প্রতীকী ছবি
জৈষ্ঠ্যের দুপুরের চড়া রোদ। হাতে চিকিৎসকের লেখা একটি কাগজ নিয়ে শহরের রাস্তায় ঘুরে একটা ঠিকানার খোঁজ করছেন বছর পঁয়তাল্লিশের মহিলা। থানা থেকে পোস্ট অফিস— সব পাক খাওয়া হয়ে গিয়েছে। কিসের ঠিকানা খুঁজছেন তা উচ্চারণ করতে পারছেন না। থানায় বা পোস্ট অফিসে গিয়ে কাউকে পেলে তাঁর মুখের সামনে তুলে ধরছেন চিকিৎসকের লেখা একটি কাগজ। চিকিৎসকের হাতে লেখা, ‘কোয়রান্টিন।’ চিকিৎসক তাঁকে কোয়রান্টিনের পরামর্শ দিয়েছে। রবিবার সারা দুপুর শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা কোয়রান্টিন কেন্দ্র খুঁজেছেন বাসাবাড়িতে কাজ করা শহর লাগোয়া ঝাঁবাড়ি এলাকার বাসিন্দা গোলাপি রায়। হেঁটে অন্তত ১৫ কিলামিটার চষে বিকেলে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে পৌঁছলেও সেখানে তাঁকে নেওয়া হয়নি বলে দাবি। আপাতত নিজের বাড়ির রান্নাঘর থেকে হাঁড়ি-কড়াই-উনুন বার করে সেখানেই ‘কোয়রান্টিনে’ থাকছেন গোলাপি।
কেন রান্নাঘরে কোয়রান্টিনে থাকতে হচ্ছে গোলাপি রায়কে?
এর নেপথ্যে রয়েছে নিজের সংসারের হেঁসেল সামালানোর কাহিনি। গোলাপি রায়ের স্বামী এবং ছেলে দু’জনেই প্যান্ডেল বাঁধার কাজ করেন। লকডাউনে অনুষ্ঠান নেই, তাই প্যান্ডেলের কাজও হয়নি। স্বামী-ছেলের লকডাউনে রোজগার নেই। সংসারের হাঁড়ি চালাতে বাসাবাড়ির পরিচারিকার কাজ ধরেন। সেখানেই বিপত্তি। জলপাইগুড়ির নিউটাউন পাড়ার এক বাড়িতে কাজে ঢোকার পাঁচদিন পরেই কত্রী করোনায় আক্রান্ত হন। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কোভিড হাসপাতালে। সকলে জানিয়েছে, করোনা আক্রান্তের কাছাকাছি আসায় তাঁকে কোয়রান্টিনে থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। প্রশাসনের উদ্যোগের অপেক্ষায় না থেকে নিজেই হাসপাতালে যান।
রবিবার সকালে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। চিকিৎসক কাগজে কোয়রান্টিনে যাওয়ার পরামর্শ লেখে দেন। তারপর থেকেই কোয়রান্টিনের খোঁজ শুরু হয় গোলাপির। বিকেলে জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি পাড়ায় সরকারি কোয়রান্টিনে পৌঁছেও যান। গোলাপি বলেন, “সেখানকার কর্মীরা বলল, বাড়িতেই কোয়রান্টিন থাকতে হবে। তাই রান্নাঘরে থাকছি।” গত রবিবার সকাল থেকে বিকেল যেখানেই গিয়েছেন হেঁটেই যান। টাকা থাকলেও টোটোতে ওঠেননি। গোলাপি বললেন, “সবাই বলেছে, আমার থেকে রোগ ছড়াবে। টোটোতে উঠলে সেখানেও রোগ ছড়াবে। আমার বাড়িতে নাতি আছে, প্রিয়জনের মর্ম বুঝি। কাউকে বিপদে ফেলতে চাইনি।”