—প্রতীকী চিত্র।
এই মুহূর্তে গোটা রাজ্য তথা দেশ জুড়ে যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক, আলোড়ন ও প্রতিবাদ চলছে তা হল কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে কর্মরত এক মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ। বিষয়টি যে শুধু নিছক একটি বিচ্ছিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা তা কিন্ত নয়। এ ঘটনা নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক ও অমানবিক। দোষীদের উপযুক্ত, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। এটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক-শিক্ষার্থী মহলে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে, তা একশো শতাংশ যৌক্তিক। এমনকি, রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও যে আজ সরব হয়েছেন, বিক্ষোভের পথে নেমেছেন, তাও পূর্ণ মাত্রায় সমর্থনযোগ্য। যে কোনও অপরাধমূলক ঘটনা, যা সমাজের পক্ষে বিপদের সঙ্কেত বয়ে আনে, তা নির্মূল করার অন্যতম অস্ত্র অবশ্যই প্রতিবাদ। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্রাতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছেলেমেয়েরা নির্বিশেষে একত্রিত হচ্ছেন, তাঁদের প্রতিবাদী ভাষা নিয়ে। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। এই প্রতিবাদ চোখে আঙুল দিয়ে বলেছে, তোমরা এতদিন উদাসীন ছিলে। মানুষের স্বার্থে এ বার সচেতন হও।
অন্য দিকে, এও প্রশ্ন উঠছে যে একটা অপরাধের ঘটনা নিয়ে যখন কথা চলবে, বিতর্ক চলবে, বিচারের দাবিতে জনগণ সোচ্চার হবে, তখন সেই অবসরে অসংখ্য নিরীহ সাধারণ মানুষকে কতদিন বা চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত রাখা যায়? কোনও রাজনৈতিক বন্ধের সময়েও শিশুখাদ্য, দমকল, পানীয় জলের মতোই হাসপাতাল পরিষেবাও তো খোলা থাকে। তা হলে হাসপাতালের পরিষেবা বন্ধের এই ছবি কেন দেখতে হচ্ছে রাজ্য জুড়ে? এই প্রতিবাদের গেরোয় অনাকাঙ্খিত ভাবে কিছুটা জড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার প্রশ্নটি। যাঁরা সরকারি হাসপাতালে দুই টাকার টিকিটের বিনিময়ে সুচিকিৎসা পেতেন তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন, হয়রান হচ্ছেন এটা সত্যি। তবে এটাও ঠিক যে, এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও সারা রাজ্যে জুড়ে হাসপাতালের জরুরি পরিষেবা চব্বিশ ঘণ্টা সচল রেখেছেন চিকিৎসকেরা। রাজ্য জুড়ে নিয়মিত সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চালু রয়েছে টেলিমেডিসিন পরিষেবা। অতএব আন্দোলনের জন্য সাধারণ মানুষের চিকিৎসা থেকে চিকিৎসকেরা কেউই দূরে সরে যায়নি। এই ঘটনায় দ্রুত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরবর্তী সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের এই কর্মবিরতি। আমার মনে হয় এই কঠিনতম পরিস্থিতিতে সব ভেদাভেদ ভুলে,সমস্ত রাজনৈতিক বিধি নিষেধের বাইরে সর্বস্তরের মানুষ বিবেক নিয়ে এগিয়ে আসুক।
(আয়ুর্বেদ চিকিৎসক, গ্রামীণ হাসপাতাল, মালদহ)