স্বামীকে পিঠে করে দোতলার বহির্বিভাগে নিয়ে যাচ্ছেন স্ত্রী। রায়গঞ্জ মেডিক্যালে। —নিজস্ব চিত্র।
একই দিনে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে জোড়া অভিযোগ উঠল উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। স্যালাইনের অভাব এবং চিকিৎসায় গাফিলতিতে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে সোমবার পরিবারের তরফে মেডিক্যালের সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। এ দিনই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হুইলচেয়ার না পাওয়ায় এক মহিলা স্বামীকে পিঠে করে দোতলার বহির্বিভাগে নিয়ে যান বলেও দাবি। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য তথা রায়গঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর প্রতিনিধিরা হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করেন।
সূত্রের খবর, এ দিন বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে মারা যান বছর ৫১-র হিরণ্ময় মোহান্ত। তাঁর বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ শহরের শান্তিকলোনিতে। স্যালাইনের অভাব ওচিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগে প্রৌঢ়ের পরিবার জরুরি বিভাগের সামনে বিক্ষোভ দেখায়।
হিরণ্ময়ের শ্যালক দেবরঞ্জন দাস জানান, রবিবার রাতে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে হিরণ্ময়কে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দাবি, ভর্তির পরে রোগীর হাতে স্যালাইন চ্যানেলের ব্যবস্থাও করা হয়। তবে দেবরঞ্জনের অভিযোগ, ‘‘ডাক্তার-নার্সদের বার বার স্যালাইনের কথা বললেও দেওয়া হয়নি। ঠিকঠাক চিকিৎসাও হয়নি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘রাতেই ডাক্তার ভগ্নিপতিকে ‘সিসিইউ’-তে ‘রেফার’ করেন। সেখানে নিয়ে যাওয়া হলে হয়তো উনি মারা যেতেন না।’’ মৃতের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত দাবি করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছি।’’
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই রোগীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আনা হয় এবং চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি। রায়গঞ্জ মেডিক্যালের সুপার প্রিয়ঙ্কর রায়ের বক্তব্য, সমস্ত ওয়ার্ডেই স্বাস্থ্য দফতর স্বীকৃত স্যালাইন মজুত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘রোগীকে স্যালাইন, ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। সিসিইউ-তে জায়গা না থাকায় সময় মতো পাঠানো যায়নি। তবে অভিযোগ ওঠায় তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
হাসপাতালে চাঞ্চল্য তৈরি হয় হুইলচেয়ার না মেলার অভিযোগেও। দাবি, জরুরি বিভাগে হুইলচেয়ার না পেয়ে স্বামীকে পিঠে তুলে দোতলায় বহির্বিভাগে নিয়ে যান এক মহিলা। রায়গঞ্জের রায়পুরের বাসিন্দা বছর চুয়ান্নর ওই ব্যক্তির নাম পরিতোষ বর্মণ। তাঁর স্ত্রী সলিতা বর্মণ জানান, ঘরের চাল ভেঙে পড়ে দু’পায়ে চোট লাগে পরিতোষের। সলিতা বলেন, ‘‘হাসপাতালে অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করেও হুইলচেয়ার পাইনি। তখন ওঁকে পিঠে করে দোতলায় নিয়ে গিয়েছি।’’ সুপারের দাবি, হাসপাতালে পর্যাপ্ত হুইলচেয়ার রয়েছে। তবে বিধায়ক কৃষ্ণকল্যাণীর দাবি, মেডিক্যালে কোথাও হুইলচেয়ারের অভাব থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।