—প্রতীকী চিত্র।
কামরার দরজা বন্ধ হয়ে হাওড়াগামী বন্দে ভারত এক্সপ্রেস সবে নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। সে ট্রেন ধরার জন্য ছুটছিলেন বাগডোগরার বাসিন্দা উজ্জ্বল ভৌমিক (৪০)। হঠাৎ প্ল্যাটফর্মের উপর পড়ে ঘটনাস্থলেই আকস্মিক মৃত্যু ঘটল তাঁর। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টে নাগাদ ওই ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছেন প্ল্যাটফর্মে কর্তব্যরত রেলকর্মীরাও। কী ভাবে তিনি মারা গেলেন, তা অবশ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর দেহ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের দাবি, ট্রেন ধরার জন্য দৌড়তে গিয়ে রক্তচাপ অস্বাভাবিক বেড়ে হৃদ্যন্ত্র বিকল হয়ে মারা গিয়ে থাকতে পারেন তিনি। তবে ময়না-তদন্তের পরে, বিষয়টি আরও ভাল ভাবে জানা সম্ভব বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। বন্দে ভারতে উঠতে গিয়ে যাত্রী মারা যাওয়ার ঘটনা রাজ্যে এই প্রথম।
এনজেপি রেল পুলিশ এবং রেল সুরক্ষা বাহিনী সূত্রে দাবি, বাগডোগরার ক্ষুদিরামপল্লির বাসিন্দা উজ্জ্বল পেশায় ব্যবসায়ী। বাড়িতে তাঁর মা, স্ত্রী এবং ছ’মাসের কন্যাসন্তান রয়েছে। মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন এনজেপিতে আসেন তাঁর বন্ধু গৌতম সরকার। তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসা সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করতে কলকাতায় যাচ্ছিল উজ্জ্বল। এ রকম কী ভাবে হল, তা বুঝে উঠতে পারছি না!’’
সাধারণত প্রান্তিক স্টেশন বা বড় স্টপ থেকে ছাড়ার সময় অন্য মেল এবং এক্সপ্রেস ট্রেনের দরজা খোলা থাকে। কিন্তু বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রে পুরো ব্যবস্থাটিই আলাদা। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেন, ‘‘এনজেপির ঘটনা খুবই দুঃখজনক। বন্দে ভারতে যাত্রী নিরাপত্তা বাড়াতেই দরজা বন্ধ হওয়ার পরেই প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন ছাড়ার নিয়ম।’’ এ দিনও তা-ই হয়েছিল। বিকেল ৩টে নাগাদ ট্রেনটি প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। স্টেশনে আসতে দেরি করে ফেলেন উজ্জ্বল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্টেশনের ফুট ওভারব্রিজ থেকেই দৌড়তে শুরু করেন উজ্জ্বল। প্ল্যাটফর্মে চোখের সামনে ট্রেন বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে তিনি হাত, পা নেড়ে, চিৎকার করে ট্রেনটি থামানোর কথা বলতে বলতে ট্রেনের পিছনে আরও জোরে ছুটতে শুরু করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি। যদিও ট্রেনটি দাঁড়ায়নি। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই প্ল্যাটফর্মের উপরে পড়ে চেতনা হারান উজ্জ্বল। ওই সময় অযোধ্যামুখী ট্রেন ছাড়ছিল বলে এনজেপি রেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা প্ল্যাটফর্মেই কর্তব্যরত ছিলেন। তখনই পরীক্ষা করে উজ্জ্বলকে মৃত ঘোষণা করেন তাঁরা।