কামিরুল ইসলাম লখনউ ফেরত শ্রমিক, ডাঙ্গিলার বাসিন্দা
আট বছর ধরে লখনউয়ে থাকি। হজরতগঞ্জের তুলসীবাজারে এক হোটেলে ২২ জন কাজ করতাম। আমি খাবার পরিবেশন করতাম। রাতে ঘুমোতাম হোটেলেই। কয়েক বছরেই সবাই কখন আপনজন হয়ে গিয়েছি। হোটেল মালিক পঙ্কজ তেওয়ারি আমাদের সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। পরিচিত হয়ে গিয়েছিল গোটা এলাকা।
হঠাৎ সব যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল! চেনা শহর এক লহমায় অচেনা।
নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে ওই এলাকায় কারা গন্ডগোল করেছে জানতাম না। কিন্তু আচমকা পুলিশ এসে আমাদের হোটেলে ঢুকল। সবাইকে বের করে মারধর করল। সঙ্গে হুমকিও — ‘এক ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। বাড়ি চলে যা, না হলে জেলে ঢোকাব।’ আমাকে পুলিশ প্রায় ধরে ফেলছিল। কোনও রকমে হোটেলের পিছনে গিয়ে লুকিয়ে বেঁচে গিয়েছি। না হলে হয়তো ছ’জনের মতো আমাকেও জেলে ঢুকতে হত।
মালিক সব সময় হোটেলে থাকেন না। ফোনে তাঁকে সব জানালাম। তিনি থেকে যেতে বললেও ভরসা পাইনি। তাই পরের দিন না জানিয়েই হোটেল থেকে বেরিয়ে স্টেশনে গেলাম। সঙ্গে কিছু নিতে পারিনি। রাস্তা পুরো ফাঁকা ছিল। দেড় ঘণ্টা হেঁটে চারবাগ স্টেশনে পৌঁছে ট্রেনে উঠলাম। এক জনের বেশি দেখলে পুলিশ ধরতে পারে সেই ভয়ে সবাই একা একা বেরিয়েছি।
ট্রেনে উঠে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেও, বার বার আমার গ্রামের চার জন আর জনমদোলের দু’জন সহকর্মীর কথা মনে পড়ছিল। ওঁরা আমাদের পাশের হোটেলে কাজ করত। কাজের ফাঁকে সকলে মিলে কত মজা করতাম। মনে হত বাড়িতেই রয়েছি।
তুলসীবাজারে রাস্তার পাশে কুড়ির বেশি হোটেল। সেখানে হরিশ্চন্দ্রপুরের অনেক শ্রমিক রয়েছে। ১৯ ডিসেম্বর সেখানেই গন্ডগোল হয়েছিল। তার পরে পরিচিতদের খোঁজ নিতে রাস্তায় বেরিয়েছিল খাইরুল হক, সালেদুল হক, সাঞ্জুর আলি, সাগর আলি। ওরা আমার কাছেও এসেছিল। ওদের তাড়াতাড়ি হোটেলে ফিরে যেতে বলেছিলাম। পরে শুনি, ফেরার সময়েই পুলিশ ওদের গ্রেফতার করেছে।
আজ ওখানে আদালত খুলেছে। এখান থেকে লোকজন গিয়েছেন। ওখানেও কয়েক জন রয়েছেন। তাঁরা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন। দু-এক দিনের মধ্যে জামিনের আবেদন জানানো হবে শুনেছি। সারাক্ষণ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি, যাতে দ্রুত ছাড়া পেয়ে ওরা বাড়ি ফিরতে পারে।