হাসপাতালে আহত নারায়ণ।— নিজস্ব চিত্র
পাড়ার রাস্তাতেই নিজের মনে খেলছিল বছর সাতেকের নারায়ণ। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ এসে তার ডান হাতে একটা দড়ি পরিয়ে দেয়। পিছনে ফিরতেই শুধু চোখে পড়ল খুব চেনা একটা চেহারা পাশের গলিতে দৌড়ে মিলিয়ে গেল। আর এ দিকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই টান পড়ল হাতের দড়িতে। দড়ির অন্য প্রান্ত যে বাচ্চা মোষটির গলায় বাঁধা ছিল, সে তত ক্ষণে প্রাণপণে ছুটতে শুরু করেছে। ওই ভাবেই হাত বাঁধা অবস্থায় নারায়ণকে ছেঁচড়ে প্রায় একশো মিটার রাস্তা ছুটে চলে মোষটি।
শনিবার দুপুরে একটি শিশুকে ক্ষতবিক্ষত করে এমনই ‘মশকরা’র নজির তৈরি হল জলপাইগুড়ির ২২ নম্বর ওয়ার্ডের পবিত্রনগর কলোনি। নারায়ণের মা শম্পা দে সরকার ঘটনায় পাড়ারই বাসিন্দা ওই মোষের মালিক রবি রায়ের বিরুদ্ধে জলপাইগুড়ির কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। শিশুটিকে ছেঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার পর এক সময় মোষটির গলা থেকে বাঁধন খুলে পড়ে। সে রবিদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে আর বেহুঁশ অবস্থায় নারায়ণকে ভর্তি করানো হয় জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে। শম্পাদেবী বলেন, “আমি রবির কঠোর শাস্তি দাবি করছি।”
জলপাইগুড়ির কোতোয়ালি থানার আইসি আশিস রায় বলেন, “মামলা রুজু করা হয়েছে। শনিবার ছেলেটির বাড়িতে তল্লাশি করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।” যদিও রবিবার দুপুরে রবির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বছর আঠারোর তরুণ রবি বসে ভাত খাচ্ছে। তার দাবি, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। যখন ঘটনাটি ঘটেছিল তখন আমি কাছেই এক জায়গায় বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক করছিলাম।” তবে ঘটনার দু’দিন পরেও তাকে ধরা গেল না কেন, তার সদুত্তর মেলেনি পুলিশের কাছে।
নারায়ণের বাবা নান্টুবাবু রাজমিস্ত্রিদের সঙ্গে কাজ করেন, মা গৃহবধূ। তার হাতে যখন দড়িটি বাঁধা হয়, তখন তার বাবা কাজে গিয়েছিলেন, মাও ঘরের কাজে ব্যস্ত। আশপাশেও তখন কেউ ছিলেন না বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। তবে মোষটি যখন ছুটতে শুরু করে তখন পাড়ারই আর এক তরুণ শুভ মল্লিক চোখে ঘটনাটি পড়ে। তিনি জানান, “রাস্তার ওপারে নারায়ণ দাঁড়িয়ে ছিল। মোষের বাচ্চার গলার দড়িটা তার হাতের সঙ্গে বাঁধা ছিল। হঠাৎ দেখলাম মোষের বাচ্চাটা দৌড় শুরু করল।” এলাকার প্রাথমিক স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র নারায়ণের অভিযোগ, “আমার পিছন দিক থেকে কেউ এসে আমার হাতে দড়ি বেঁধে দেয়। পিছনে ফিরতেই রবিকে দেখলাম গলির দিকে পালিয়ে যাচ্ছে।”
নারায়ণ জ্ঞান হারিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে গেলে এলাকার বাসিন্দা রঞ্জিত দাস তার হাতের দড়ি কেটে দেন। সারা গায়ে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আদতে বিহারের বাসিন্দা রবি এবং তার পরিবার এখানে দুধের কারবার করে। তাদের একাধিক গরু মোষ রয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, রবির বিরুদ্ধে এ ধরনের বিভিন্ন কার্যকলাপের অভিযোগ এর আগেও এসেছে।