শোকার্ত: করিমের পরিজনেরা। (ইনসেটে) করিম শেখ। নিজস্ব চিত্র
বিদ্যুতের খুঁটিতে বাঁধা হাত-পা। গলা থেকে মাথা জড়ানো পলিথিনে। ‘টিকটক’ ভিডিয়ো তুলতে এমনই কাজ করেছিল এক কিশোর। সঙ্গী ছিল দুই বন্ধু।
কিন্তু ছবিটা বদলায় কয়েক মুহূর্তেই। স্থানীয় সূত্রে খবর, পলিথিনে দম বন্ধ হওয়ায় ছটফট শুরু করে ওই কিশোর। ভয় পেয়ে সেই মোড়ক সরাতে গিয়ে তাড়াহুড়োয় পলিথিনে আরও জট পাকিয়ে ফেলে দুই বন্ধু। ক্রমে নিস্তজ হয়ে পড়ে ওই কিশোর। আশপাশের লোককে ডেকে এনে ছুরি দিয়ে কাটা হয় পলিথিনের আবরণ। বেহুঁশ কিশোরকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
মঙ্গলবার রাতে মালদহের পুখুরিয়া থানার পিরগাই এলাকার ঘটনা। অভিযোগ, ‘টিকটক’ ভিডিয়ো তুলতে গিয়েই ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম করিম শেখ (১৬)। ঘটনার পরেই তার দুই বন্ধু এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। শুরু হয়েছে তদন্ত। চাঁচলের এসডিপিও সজলকান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘‘কোনও খেলা খেলতে গিয়েই ঘটনাটি ঘটে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। দুই সঙ্গীকে খোঁজা হচ্ছে। তাদের কাছে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।’’
পুলিশ ও মৃতের পরিজন সূত্রে জানা গিয়েছে, রতুয়া ২ ব্লকের পিরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের পিরগাই এলাকার বাড়ি ওই কিশোরের। তারা পাঁচ ভাই। বাবা হায়াত আলি মুম্বইয়ে শ্রমিকের কাজ করেন। করিমও শ্রমিকের কাজ করত। রাতে তার দুই বন্ধু আব্দুল শেখ ও জাহির শেখ তাকে ডেকে নিয়ে যায়। তারা টিকটকের জন্য ভিডিয়ো তুলছিল।
মৃত কিশোরের প্রতিবেশী তথা পিরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য মাসিদুর রহমান বলেন, ‘‘দম নিতে না পেরে ও যখন ছটফট করছিল তখন পলিথিন খুলতে না পারায় করিমের মৃত্যু হয়---------------।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, বাবা হায়াত ছেলের মৃত্যুর কথা শুনে মুম্বই থেকে রওনা দিয়েছেন। মা নীলু বিবি বলেন, ‘‘রাতে দুই বন্ধু ওকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। ছেলেটা আর কোনওদিন ফিরবে না জানলে ওকে যেতে দিতাম না।’’ করিমের সঙ্গী জাকিরের বাবা মানু শেখ ঘটনায় হতবাক। তিনি বলেন, ‘‘ওরা তিন বন্ধু একসঙ্গেই থাকত। কী থেকে যে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।’’