৭ কর্মী বহিষ্কৃত, তৃণমূলে প্রশ্নের মুখে সৌরভও

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসে যাওয়ার পরে পুরভোটের মুখে জলপাইগুড়ির এক নেত্রী সহ দলের স্থানীয় সাত কর্মীকে এক সঙ্গে বহিষ্কার করল তৃণমূল। বহিষ্কৃতদের বিরুদ্ধে দলের জলপাইগুড়ির সাংসদ বিজয় বর্মনকে লাঠিপেটা করা ও জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীকে কলার ধরে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় দলের অন্দরে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন সৌরভবাবুও।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪০
Share:

তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী দীপা ঘোষ, সাগরিকা সেন এবং কৃষ্ণা দত্ত। (বাঁ দিক থেকে) ছবি: সন্দীপ পাল।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসে যাওয়ার পরে পুরভোটের মুখে জলপাইগুড়ির এক নেত্রী সহ দলের স্থানীয় সাত কর্মীকে এক সঙ্গে বহিষ্কার করল তৃণমূল। বহিষ্কৃতদের বিরুদ্ধে দলের জলপাইগুড়ির সাংসদ বিজয় বর্মনকে লাঠিপেটা করা ও জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীকে কলার ধরে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় দলের অন্দরে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন সৌরভবাবুও। তিনি একই সঙ্গে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে দলের জেলা সভাপতি। কিন্তু সেই গুরুদায়িত্ব তিনি সামলাতে পারছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরেই।

Advertisement

সৌরভবাবু জলপাইগুড়ির জেলা সভাপতি হওয়ার পর থেকে প্রকাশ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা লেগেই থাকছে। তাই সৌরভবাবুকে নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য স্তরেও প্রশ্ন উঠছে। জলপাইগুড়ির কয়েকজন প্রবীণ নেতাও সৌরভবাবুকে একই সঙ্গে দুই জেলার দায়িত্বে রাখার বিরোধী। তাঁরা সে কথা প্রদেশ নেতৃত্বকে জানিয়েওছেন। এই পরিস্থিতিতে পুরভোটের পরে সৌরভবাবুকে শুধু আলিপুরদুয়ারের দায়িত্ব দিয়ে জলপাইগুড়িতে সভাপতি পদে তৃণমূলের কোনও প্রবীণ নেতাকে বসানো হতে পারে বলেও দল সূত্রের খবর। তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি কল্যাণ চক্রবর্তী এদিন বলেছেন, ‘‘জলপাইগুড়ির জেলা সভাপতি স্থানীয় বাসিন্দা হলেই ভাল। এটা প্রদেশ নেতাদের আগেও জানিয়েছি। ফের জানাব।’’ জেলার আরেক প্রাক্তন শীর্ষ নেতা জানান, দুই জেলার দুই সভাপতি হলে সংগঠনই বেশি শক্তিশালী হত।

এই প্রসঙ্গে সৌরভবাবুর মন্তব্য, ‘‘কে, কী বলছেন জানি না। আমি এটা বলতে পারি, দলনেত্রী যে ভাবে চলতে বলেন, সে ভাবেই চলি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এখন পুরভোটে জেতাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। বাকি কথা পরে হবে।’’

Advertisement

যে সাত জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাঁরা সকলেই পুরনো তৃণমূলকর্মী। বহিষ্কৃত নেত্রী তৃণমূল নেত্রী সাগরিকা সেন (বিউটি) প্রদেশ মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য এবং উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ডিরেক্টর। তিনি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ঘনিষ্ঠ বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। বহিষ্কার করা হয়েছে দীপা ঘোষ, কৃষ্ণা দত্ত, অপর্ণা ভট্টাচার্য, সদন ছেত্রি, স্বপন সরকার ও মিনা বণিককে। শো কজ করা হয়েছে শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়কে। হয়। বিউটিদেবী এ দিন বলেন, ‘‘প্রথম দিন থেকেই দিদির সঙ্গে রয়েছি। এখনও মনেপ্রাণে আছি। আগামীতেও থাকব।’’

জলপাইগুড়ির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘পুরানো কর্মী বলে কেউ অনুশাসন মানবেন না, এটা হতে পারে না। সে জন্য ৭ জনকে বহিষ্কার করার পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে।’’ তবে সৌরভবাবু সম্পর্কে প্রবীণ নেতাদের মতামত নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের মহাসচিব। তাঁর জবাব, ‘‘সংগঠন আরও জোরদার করার জন্য পুরানো নেতা-কর্মীদের মতামত অবশ্যই শোনা হবে। জলপাইগুড়ির সকলে মিলে সেখানে পুরভোটে জয় নিশ্চিত করুক। তার পরে গিয়ে সব শুনে পদক্ষেপ করব।’

কেন নেতাদের উপরে হামলা হল? বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, পুরভোটে কাউন্সিলর পদের টিকিট বিলিতে কারচুপি করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, টিকিট বিলির ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ত্ব করা হয়েছে। আদি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলেও তাঁরা দাবি করেছেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে টাকা নিয়ে দলের টিকিট দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিক্ষুব্ধরা। নেতারা সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।

দলের অন্দরের খবর, একদা মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে তৃণমূলের মধ্যে পরিচিত সৌরভবাবু দু’টি জেলার সভাপতি পদে থাকায় অনেকের ঈর্ষার পাত্র। সেই সঙ্গে সৌরভবাবু একটি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান এবং এনবিএসটিসি-র অন্যতম ডিরেক্টর। নানা সময়ে জলপাগুড়িতে দলের বিক্ষুব্ধদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন তিনি। সম্প্রতি সেই ক্ষোভের রেশ পৌঁছয় সাংসদের বাড়িতেও। সোমবার সন্ধ্যায় তা চরমে ওঠে। অভিযোগ, সে দিন বিউটিদেবীর নেতৃত্বে পুরসভার অতিথি নিবাসে তৃণমূলের দলীয় বৈঠকে হামলা হয়। সেখানে সাংসদের মাথায় লাঠির বাড়ি দেওয়া হয়। সৌরভবাবুর কলার ধরা হয়। রাতেই দলনেত্রী, মহাসচিবকে বিষয়টি জানিয়ে দেন সাংসদ। এর পরেই কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ পৌঁছয়।

তবে সৌরভবাবু তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে বলে মানতে চাননি। তা হলে সোমবারের ঘটনার পরে কেন তড়িঘড়ি সভা ডেকে ওই সাত জনকে বহিষ্কার করা হল? সৌরভবাবুর দাবি, পুরনো ঘটনার জেরেই ওই সাত জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement