বাস উদ্বোধনে শুভেন্দু অধিকারী। — বিশ্বরূপ বসাক
লোকসানের বহর কিছুটা কমিয়ে ‘পুরস্কার’ হিসেবে ৩০টি নতুন বাস পেল উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে নিগমের নতুন বাসগুলির উদ্বোধন করেছেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
এই উদ্বোধনের জন্যই কয়েক ঘণ্টার জন্য শিলিগুড়িতে এসেছিলেন শুভেন্দু। নতুন বাস ‘উপহারের’ পাশাপাশি তিনি উত্তরবঙ্গে পরিবহণের ক্ষেত্রে শুনিয়ে গেলেন আরও কিছু সুখবরও। তার মধ্যে প্রধান, জমি জটে দীর্ঘদিন ধরে আটকে ছিল বাগডোগরা বিমানবন্দরে ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেমের কাজ। এ দিন তার জন্য প্রয়োজনীয় ১ একর ১৮ ডেসিমেল জমির নথি বিমানবন্দর অধিকর্তার হাতে তুলে দিলেন শুভেন্দু। এই ব্যবস্থা চালু হলে বিমান নামার ক্ষেত্রে সুবিধা অনেকটাই বেড়ে যাবে। এখন সন্ধ্যা নামতেই বিমান নামা বন্ধ হয়ে যায় বাগডোগরায়। এই ব্যবস্থা চালু হলে গভীর রাতে তো বটেই, এমনকী শীতকালে কুয়াশার সময়ে ভোরেও বিমান অবতরণ সহজ হয়ে যাবে। বাগডোগরার পাশাপাশি কোচবিহারেও চলতি বছর থেকে উড়ান চালু করার আশ্বাস দিয়েছেন শুভেন্দু।
সড়ক পরিবহণে একটি বিলাসবহুল বেসরকারি বাস সংস্থার সঙ্গে তাঁর দফতরের চুক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে শিলিগুড়ি, কোচবিহার, বালুরঘাটের সঙ্গে কলকাতা যোগাযোগ শুরু হতে পারে। পরিবহণমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘এগুলোর কোনওটাই কথার কথা নয়। সব ক’টির সরকারি প্রক্রিয়াই শুরু হয়ে গিয়েছে।’’
এ দিন মাটিগাড়ায় নিগমের ডিপো চত্বরের অনুষ্ঠানে উত্তরবঙ্গের সব মন্ত্রীই উপস্থিত ছিলেন। এক দিকে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব, অন্য দিকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। ছিলেন বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন এবং আদিবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জেমস কুজুর। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, শুধু বাস উদ্বোধন নয়, এ দিন বাগডোগরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে জমি তুলে দেওয়ার মতো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিষয় থাকায় পরিবহণমন্ত্রী নিজে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন। বিমানবন্দরের জমিজট দ্রুত কাটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরকে। ৪১ জন জমির মালিকের থেকে আড়াই কোটিরও বেশি টাকা দিয়ে পুরো জমিটি কিনেছে তারা। এ দিন পর্ষদের তরফে প্রথমে জমিটি পরিবহণ দফতরকে দেওয়া হয়। তার পরে পরিবহণ দফতর জমি তুলে দিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে।
দীর্ঘদিন আর্থিক ভাবে চাপের মধ্যে থাকা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম বা এনবিএসটিসি সম্প্রতি তাদের লোকসানের বহর অনেকটাই কমাতে পেরেছে। এক সময়ে আয়ের থেকে খরচের পরিমাণ একশো কোটিরও বেশি ছিল। কিন্তু গত বছরের রিপোর্টে নিগমের এই ফারাক দাঁড়িয়েছে কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ কোটি। এর পুরস্কার হিসেবে শুধু এ দিনের নতুন বাস নয়, চলতি আর্থিক বছরে রাজ্যের কাছ থেকে আরও কিছু বাস পেতে পারে নিগম। দাবি করা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে নিগম মোট ৭০টি নতুন বাস পাবে। তার মধ্যে ৩০টি বাস এ দিন হাতে চলে এল। কেন্দ্রের কাছ থেকে পাওয়া বাস চালিয়েই আয় বেড়েছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। তাই এ বার রাজ্যের তরফেও কেতাদুরস্ত বাসই দেওয়া হয়েছে নিগমকে।
নিগমের আয় বাড়ানো নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। নিগমের সূত্রে বলা হচ্ছে, এখন তাদের হাতে সাড়ে সাতশোরও বেশি বাস রয়েছে। তার মধ্যে চারশোর বেশি বাস জরাজীর্ণ। সেগুলির বয়স ৮ বছর বা তার বেশি। সেই বাস চালিয়ে দিনদিন নিগমের খরচ বাড়ছে। দ্রুত সেগুলি বদলাতে না পারলে আয় আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা কম বলেই নিগমের বক্তব্য।
এ ছাড়া, ভারত বন্ধ এবং পাহাড় বন্ধের দিনে বাস চালানোর জন্য নিগমের কর্মীদের অভিনন্দন জানান পরিবহণমন্ত্রী। নিগমের কর্মী-আধিকারিকরা বন্ধ করার নেতিবাচক মনোভাব ভেঙে দিয়েছেন বলেও শুভেন্দু দাবি করেছেন।