প্রতীকী ছবি।
বছর শেষ হতে এখনও মাস পাঁচেক বাকি, জলপাইগুড়ি জেলায় একশো দিনের কাজে তৈরি হওয়া শ্রমদিবস এক কোটি ছাড়িয়ে গেল। করোনা কালে কাজে যখন মন্দা, একশো দিনের প্রকল্পে ঝুঁকেছেন বেশিরভাগ মানুষ। পরিযায়ীদের একাংশকেও এই প্রকল্পে কাজ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সব মিলিয়ে প্রকল্পে কাজের চাহিদা বেড়েছিল। লকডাউনের সময়ে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যে বা যাঁরাই চাইবেন, তাঁদেরই কাজ দেওয়া হবে। তাই বহু ছোট প্রকল্পও এ বছর একশো দিনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যেগুলি সাধারণ সময়ে কখনওই অনুমোদন পেত না বলে দাবি প্রশাসনের। তারই ফলে বহু মানুষের কাজ পাওয়া এবং কাজের দিনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। এ দিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জলপাইগুড়ি জেলায় একশো দিনের কাজে মোট ১ কোটি ৯৯ হাজার শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে। করোনা সংক্রমণের বছরের মাত্র সাত মাসেই গত বছরের রেকর্ডকেও টপকে গিয়েছে জলপাইগুড়ি। গত আর্থিক বছরে জেলায় প্রায় ২ লক্ষ ৮৭ হাজার পরিবার কাজ পেয়েছিল, এ বছর এখনই ২ লক্ষ ৯৭ হাজার পরিবার কাজ পেয়েছে।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি যত বেশি সম্ভব মানুষকে কাজ দেওয়া যায়। এ বছর লকডাউনের সময়ে সব কাজকর্ম বন্ধ ছিল। তখন সকলকে আমরা একশো দিনের প্রকল্পে কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যাঁদের জবকার্ড নেই তাঁদের দ্রুত বানিয়ে দিয়ে কাজ দেওয়া হয়।”
গত বছর জলপাইগুড়ি জেলা একশো দিনের প্রকল্পে গড় কাজের দিনে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। তা নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন গত বছর। প্রশাসনের একাংশের দাবি ছিল, রাজনৈতিক কারণে সে বছর জেলায় একশো দিনের প্রকল্প বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ময়নাগুড়ি ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে একশো দিনের কাজ প্রায় বন্ধের মুখে পড়েছিল। গত বছর লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়িতে বিজেপির বিপুল জয়ের পরে বহু গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাত থেকে রাতারাতি বিজেপিতে চলে যায়। কিছু দিন পরে সেগুলি ফের বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফেরে। এই পরিবর্তন, পাল্টা পরিবর্তনে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে একশো দিনের প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। তার প্রভাব গোটা জেলার পড়েছিল। এ বছর আর্থিক বছরের গোড়া থেকেই লকডাউন শুরু হয়। বহু মানুষ কাজ হারান। সে সময়ে সকলেই একশো দিনের কাজের ওপরে ভরসা করতে শুরু করেন।
প্রশাসন সূত্রে দাবি, গত বছর বারো মাসে প্রায় ৩ লক্ষ ৯২ হাজার বাসিন্দা কাজ পেয়েছিলেন, চলতি আর্থিক বছর শেষ হতে এখনও পাঁচ মাস বাকি। এরই মধ্যে প্রায় ৩ লক্ষ ৯৩ হাজার বাসিন্দা কাজ পেয়েছেন। গত বছর গড়ে জেলায় ৪৫ দিন কাজ হয়েছিল। এ বছর অক্টোবরেই গড় কাজ ৩৪ দিন হয়ে গিয়েছে জলপাইগুড়িতে।