ফাইল চিত্র।
একের পরে এক আন্দোলনে কার্যত ‘জেরবার’ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি থেকে শুরু করে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পিএইচ ডি-তে অনিয়মের অভিযোগে কোনও না কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের তরফে প্রায় প্রতিদিনই আন্দোলন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। কখনও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তি, কিংবা গেট ভাঙচুর। লাগাতার অশান্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেই মনে করছেন পড়ুয়া থেকে শিক্ষক-কর্মীদের একাংশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ, ৮ অগস্ট পর্যন্ত কিছু পরীক্ষা চলবে। সেপ্টেম্বরের গোড়ায় রয়েছে স্নাতকোত্তরে ভর্তির প্রক্রিয়া। আগামী ১০ অগস্ট থেকে তৃতীয় সিমেস্টারের ক্লাস শুরু হবে। অথচ, নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আন্দোলন চললে, পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়াবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেকে।
গত ২ অগস্ট বিজেপি অবস্থান-বিক্ষোভ করে। আন্দোলনকারীদের ‘হামলায়’ গেটের একাংশ ভেঙে পড়ে বলে অভিযোগ। পরের দিন এবিভিপির আন্দোলনেও উত্তেজনা ছড়ায়। শুক্রবার এসএফআই-ডিওয়াইএফ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আন্দোলনের কথা ঘোষণা করলে, পুলিশ দিয়ে সব গেট বন্ধ করানো হয়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। বামেরা পরেও আন্দোলন চালানোর ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন। কংগ্রেসও ৯ অগস্টের পরে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি রেখেছে। শুক্রবার অর্থনীতি বিভাগের পরীক্ষা ছিল। আন্দোলনকারী বামেদের আটকাতে বেলা পৌনে ১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গেট বন্ধ করা হয়। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে-বেরোতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয় অনেককে। পড়ুয়াদের একাংশের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রায় সারাক্ষণ পুলিশ থাকছে। এমন পরিস্থিতিতে অস্বস্তি হচ্ছে। আন্দোলনের তীব্রতা বাড়লে, কী হবে ভেবে আশঙ্কায় অনেক পড়ুয়াই। পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে, অঘটনের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন থাকছেন অভিভাবকেরাও। বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক দেবব্রত মিত্রের বক্তব্য, ‘‘আন্দোলনের জেরে যাতে শিক্ষার পরিবেশ, কাজকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা সবাইকে ভাবতে হবে।’’
এসএসসি-কাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যের নাম জড়িয়েছে। তিনি কলকাতায় রয়েছেন। ফোন ধরেননি। জবাব দেননি মেসেজের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সম্পাদক অর্ধেন্দু মণ্ডলের মন্তব্য, ‘‘আন্দোলনের অধিকার সবার আছে। তবে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। টানা এমন চললে, স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ থাকবে না।’’ শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মীদের একাংশের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেও আন্দোলনের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। শুক্রবারই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-অধ্যাপকদের পদোন্নতি নিয়ে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ উপাচার্যের দফতরে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমন চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘কর্তৃপক্ষ যখন নিজের মতো সব কিছু চালাতে চায়, তখন এমন অবস্থা হয়। এমন চললে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।’’