অনুদানে কোপ পড়ায় মাথায় হাত ক্লাবগুলির

গত কয়েক বছর ধরে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। সেই অভ্যাসমতো কেউ ক্লাবের ব্যাডমিন্টন ক্যাম্পে কোনও ভাল প্রশিক্ষক আনবেন বলে ভাবছিলেন। কোনও ক্লাব আবার ফুটবল ক্যাম্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিল।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২০
Share:

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ

গত কয়েক বছর ধরে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। সেই অভ্যাসমতো কেউ ক্লাবের ব্যাডমিন্টন ক্যাম্পে কোনও ভাল প্রশিক্ষক আনবেন বলে ভাবছিলেন। কোনও ক্লাব আবার ফুটবল ক্যাম্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিল। কিন্তু সোমবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের এক ঘোষণায় অন্তত এ বছরের জন্য অভ্যাসের ইতি। মন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, এ বছর উৎসব মঞ্চ থেকে কোনও ক্লাবকে অনুদান দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, নোট বাতিলের জেরে উৎসবের বাজেটই কমে গিয়েছে।

Advertisement

মন্ত্রীর এই ঘোষণায় ক্লাবকর্তারা অধিকাংশই এখন হতাশ। সোমবার রাত থেকে তাঁরা স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ‘‘২০১৬-তে বিধানসভা ভোট হয়েছে। সরকারের আর্থিক অবস্থা যেমনই থাকুক না কেন, ভোটের আগে উৎসবে জেলার ক্লাবগুলিকে টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন তো আর ভোট নেই। তাই সরকারের ক্লাবকে নিয়ে চিন্তাও নেই।’’

উৎসব ও ক্লাবের পিছনে খয়রাতির জন্য বিরোধীরা গত পাঁচ বছর ধরে বারবার কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টা করেছেন সরকারকে। এমনকী এই অভিযোগও করা হয়েছে যে, মহার্ঘ্যভাতা বাকি রেখে ক্লাব আর উৎসবে মেতে আছে সরকার। তা সত্ত্বেও অনুদান বন্ধ করা হয়নি। উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের অনেক নেতাই ঘরোয়া আলোচনায় মানছেন, ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়ার ফলে পাড়ায় পাড়ায় শাসকদলের সংগঠন বেড়েছে, মজবুতও হয়েছে। কোচবিহার, রায়গঞ্জের কয়েক জন ক্লাবকর্তাও সে কথা বলেছেন। তৃণমূল নেতারা জানিয়েছেন, বহু ক্লাবের সদস্যরা ভোটে দলের হয়ে কাজকর্মও করেছেন। তাঁদের এখন প্রশ্ন, অনুদান বন্ধ হয়ে গেলে তৃণমূলের প্রভাব প্রতিপত্তি কমে যাবে না তো? ক্লাবগুলি যে সমস্যায় পড়বে সে কথা রবীন্দ্রনাথবাবুও মেনে নিয়েছেন। তবে উত্তরবঙ্গের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাই মনে করছেন, এত দিন ধরে যে ভিত তৈরি হয়েছে, তাতে ফাটল ধরার সম্ভাবনা আপাতত নেই।

Advertisement

ক্লাবগুলির বক্তব্য, যে অনুদানের কথা মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলেছিলেন, তা এক কথায় বন্ধ হয়ে যায় কী করে! শিলিগুড়ির স্বস্তিকা যুবক স‌ঙ্ঘের শুভ্র দে বা ইউনার্স ক্লাবের সম্পাদক কার্তিক মজুমদার বলছেন, এই টাকার উপরে ভিত্তি করে আমরা ক্লাবের পরিকল্পনা করে থাকি। সারা বছর ধরে আমরা এখন কোচিং ক্যাম্প, নানান প্রতিযোগিতা করি। সেগুলো সব তোলা থাকবে।

অরুণোদয় সঙ্ঘের সম্পাদক দেবজ্যোতি বিশ্বাস জানালেন, এ বার ব্যাডমিন্টন ক্যাম্প করার কথা ছিল তাঁদের। বললেন, ‘‘দেখি, কী ভাবে টাকা জোগাড় করা যায়!’’

গত বছর উত্তরবঙ্গ উৎসবে ১২০টি ক্লাবকে ৫০ হাজার এবং ১০০টি ক্লাবকে ২৫ হাজার করে দেওয়া হয়েছে। এ বারে মন্ত্রীর ঘোষণা সত্ত্বেও তৃণমূল ছোট-বড় নেতারা এখনই হাল ছাড়তে নারাজ। তাঁদের কয়েক জন জানান, এ বার জেলাভিত্তিক ১০টি করে ক্লাবকে টাকা দেওয়া হবে বলে মোটামুটি ঠিক হয়েছিল। নোট বাতিলের জেরে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। তা-ও কলকাতায় বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ করা হচ্ছিল। তাঁদের আশা, মুখ্যমন্ত্রী চাইলে, শেষ অবধি পরিকল্পনা বদলাতেও পারে।

প্রশ্ন হল, অনুদান বন্ধের কথা কলকাতায় কতটা পৌঁছেছে?

ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘এই নিয়ে আমার কোনও ধারণাই নেই। তাই কিছুই বলতে পারব না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement