বক্তা: উত্তম মঞ্চে অরুন্ধতী রায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী এবং বাংলার বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকে কার্যত এক গোত্রে ফেলে সরব হলেন তিনি। সাহিত্যিক-সমাজকর্মী অরুন্ধতী রায়ের চোখে, ‘‘উত্তরপ্রদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব চলছে। ২০ জন প্রতিবাদী নিহত হয়েছেন। পুলিশ লুট করছে। ডাক্তারেরা আহতদের চিকিৎসা করছেন না। ওয়ার জ়োনেও (যুদ্ধক্ষেত্র) এমন হয় না।’’ দিলীপবাবুও কার্যত যোগীর প্রতিধ্বনি বলে দাবি করে বৃহস্পতিবার অরুন্ধতী বলেন, ‘‘ইউপি মডেলে আস্থাশীল দিলীপবাবুও প্রতিবাদীদের কুকুরের মতো গুলি করার কথা বলছেন। এর পরেও বলবেন, এটা গণতন্ত্র!’’ ‘পিপলস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ নামে কলকাতায় একটি তথ্যচিত্রের উৎসবের আসরে কথা বলছিলেন এই সমাজকর্মী।
সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জি রুখতে আপাতত দেশের সব অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের উপরে নির্ভর করার কথা বলছেন অরুন্ধতী। তিনি বলেন, ‘‘সংসদে বিপুল সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে শাসক দল। সিএএ এবং এনআরসি রূপায়ণ রুখতে তাই অবিজেপি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সক্রিয় হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোই দেশকে বাঁচাতে পারে। নইলে সংখ্যাগুরুবাদের তোড়ে ভেসে যেতে হবে।’’
অরুন্ধতী মনে করেন, দেশের পক্ষে এটা দারুণ সঙ্কটের মুহূর্ত, আবার আশারও। সংসদে সিএএ গৃহীত হওয়ার এক মাস আগে একটি বক্তৃতায় অরুন্ধতী বলেছিলেন, ‘‘এখনও প্রতিবাদী জনজোয়ারে দেশ উপচে না-পড়লে তা এ দেশের শেষের সঙ্কেত ধরে নিতে হবে।’’ ডিসেম্বরের শেষ থেকে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের মধ্যে তাই এক পুনরুজ্জীবিত দেশকেই দেখছেন তিনি। ‘‘আমার কাছে দেশ জুড়ে প্রতিটি মুহূর্তই শাহিন বাগ। শাহিন বাগ এখন দেশের নাম। প্রতিটি নারীর নামই শাহিন বাগ,’’ এ কথা বলে মুসলিম মেয়েদের নেতৃত্বে সম্মিলিত প্রতিবাদেই আস্থা রাখছেন অরুন্ধতী। তাঁর কথায়, ‘‘মুসলিম পুরুষকে জেহাদি বলে দাগিয়ে দেওয়া যেত। মুসলিম মেয়েরা নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে
এসে সমালোচকদের সব ছক ওলটপালট করে দিয়েছেন।’’ দেশ জুড়ে শাহিন বাগের ধাঁচে প্রতিবাদের মধ্যে একটা নারীবাদী দৃষ্টিকোণ রয়েছে। কিন্তু নানা আপাতবিরুদ্ধ স্বরের পাশে থাকা তাৎপর্যপূর্ণ। ‘আজাদি’ থেকে ‘জয় ভীম’— সব স্লোগান মিলেমিশে যাওয়ায় কিছুটা আশাবাদী অরুন্ধতী।