আমি আছি: তিনি ভিআইপি কার্ড তুলে দেওয়ার পক্ষে, এই বলে হাত তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার, নেতাজি ইন্ডোরে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে। ছবি: সুমন বল্লভ
ভিআইপি কার্ড নিয়ে দুর্গাপুজো দেখার দিন কি শেষ? শুক্রবার, নেতাজি ইন্ডোরে কলকাতা ও রাজ্যের দুর্গাপুজো নিয়ে পুলিশের ডাকা প্রস্তুতি সভায় ভিআইপি কার্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরূপ মনোভাব থেকেই উঁকি মারছে সেই প্রশ্ন। এ দিনের সভায় পুজো কমিটির কর্তাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার নিজের একটা বক্তব্য রয়েছে। আপনাদের হয়তো পছন্দ হবে না। তবু বলব, ভিআইপি গেট বাদ দিন। একদল মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, আর একদল ভিআইপি লাল গাড়ি ছুটিয়ে পুজো প্যান্ডেলে ঢুকে যাবে। এটা ঠিক নয়।’’ এর পরেই যাঁরা ভিআইপি কার্ড তুলে দেওয়ার পক্ষে, তাঁদের হাত তুলতে বলেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবে মঞ্চের নীচে থাকা অনেকে হাততালি দিয়ে তাঁকে সমর্থন জানান। মঞ্চে তখন কলকাতার চারটি বিখ্যাত পুজোর কর্মকর্তারা বসে। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য তাঁদের কতটা অস্বস্তিতে ফেলেছে, তা বোঝার আগেই দলনেত্রী নাম করে বললেন, ‘‘সুজিত তোমার পুজোয় খুব ভিড় হয়। আমি দেখেছি, সেখানে পুজো দেখতে বহু মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে। এ বার যেন ভিআইপি পাস না থাকে। কী, হবে তো?’’ ঘাড় নেড়ে সায় দেন শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের কর্তা তথা রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। মঞ্চের কিছুটা আড়ালে ছিলেন আর এক মন্ত্রী তথা সুরুচি সঙ্ঘের কর্তা অরূপ বিশ্বাস। তাঁকে লক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘অরূপ, এ বার ভিআইপি কার্ড বন্ধ হবে তো?’’ অরূপও হাত তুলে সম্মতি দেন। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর নজরে পড়ে কলকাতার মেয়র তথা চেতলা অগ্রণীর প্রধান ফিরহাদ হাকিমের দিকে। তাঁকে বলেন, ‘‘ববি, চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম। তোমাকেই করতে হবে।’’ ফিরহাদ কিছু বলার আগেই একডালিয়া এভারগ্রিনের কর্তা সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে মমতা বলেন, ‘‘সুব্রতদার অবশ্য তেমন ভিআইপি কার্ডের দরকার হয় না।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পরেই ভিআইপি কার্ড তুলে দেওয়া ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়ে যায় শহরের নামী পুজো কমিটিগুলির মধ্যে। দক্ষিণ কলকাতার একাধিক পুজোকর্তা জানান, যে পাড়া বা ক্লাবের পুজো, সেই এলাকার মানুষজনের জন্য ভিআইপি গেট প্রয়োজন। ওই গেট না থাকলে তো পুজোর কাজে বা অঞ্জলি দিতে যেতেও তাঁদের বারবার লাইনে দাঁড়াতে হবে! এটা কি সম্ভব? উত্তর কলকাতার একাধিক পুজো কমিটির কর্তারা আরও জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী থেকে শুরু করে অন্য দেশের বা অন্য রাজ্যের অনেক বিশিষ্ট মানুষজন পুজো দেখতে আসেন। তাঁদের পর্যটন দফতরের পক্ষ থেকে পুজো দেখানো হয়। তাঁদেরও কি লাইন দিয়ে ঢোকানো হবে? বৃদ্ধাশ্রম থেকেও অনেকে পুজো দেখতে আসেন। ভিআইপি গেট না থাকলে তাঁদেরও লাইন দিয়ে ঢুকতে হবে! অনেকের মতে, এই বিষয়গুলি মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আনা হোক।
এ দিন পুজোর প্রস্তুতি সভার আয়োজন করেছিল কলকাতা পুলিশ। সভার শুরুতে পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বলেন, ‘‘বাংলার শারদ উৎসব সারা বিশ্বে বন্দিত। সেই উৎসব সামলানো একা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে পুজো কমিটি ও সাধারণ মানুষ সব সময়ে আমাদের পাশে থাকে। এ বারও পুজো কমিটিগুলির সহায়তা নিয়েই পুলিশ কাজ করবে।’’ শেষ বক্তা মুখ্যমন্ত্রী প্রথমেই ভিআইপি কার্ডের কথা তোলেন। তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘চতুর্থী থেকেই লাল আলোর গাড়ি বন্ধ হওয়া দরকার। ভিআইপি থাকবে না। লাইন দিয়ে প্রতিমা দর্শন করুন। না হলে সকালে পুজো মণ্ডপে যান। পুজো কমিটি তাঁদের চা-টা দিয়ে আপ্যায়ন করতেই পারেন। দরকার হলে ফুচকা খাওয়ান। বাংলার ফুচকা খুব ভাল।’’
মুখ্যমন্ত্রী ভিআইপি কার্ড তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করলেও বাস্তবে তা কার্যকর করা হবে কি না, তা নিয়ে এ দিন দ্বিধায় শহরের অনেক পুজো কমিটি। আসলে ভিআইপি কার্ড থেকে কিছু আয়ও হয় নামীদামি একাধিক পুজো কমিটির। পুজোয় যে হারে খরচ বাড়ছে, তাতে কার্ড থেকেও আয় কমে গেলে মাথায় হাত পড়বে বলে মনে করছেন পুজো কমিটির সদস্যেরা।