ময়দানে চলছে জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো লাইনের কাজ। ছবি: সংগৃহীত।
জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো লাইনের কাজের জন্য পরিবেশ মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির অনুমতি ছাড়া কোনও গাছ কাটা যাবে না এবং কোনও গাছ তুলে অন্যত্র রোপণ করা যাবে না। আজ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, গাছ কাটার প্রয়োজন হলে বা তুলে কোথাও রোপণের দরকার হলে আগে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের ওই কমিটি তা খতিয়ে দেখবে। ২০০২ সালে পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা এবং নজরদারির জন্য ওই কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি বা সিইসি তৈরি হয়েছিল। প্রথমে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে এই কমিটি কাজ করলেও গত বছর থেকে তা পরিবেশ মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন।
কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আশেপাশে ময়দানে জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো রেলের কাজের জন্য ন’শোর বেশি গাছ কাটা পড়তে পারে বলে ‘পিপল ইউনাইটেড ফর বেটার লিভিং ইন কলকাতা’ বা ‘পাবলিক’ নামের একটি অ-সরকারি সংস্থা জনস্বার্থ মামলা করেছিল। কলকাতা হাই কোর্ট জুনে সেই মামলা খারিজ করে দেয়। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই মামলায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার একজোট হয়ে মেট্রো রেল প্রকল্পের পক্ষে সওয়াল করে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, মেট্রো রেলের কাজের জন্য ময়দান এলাকায় আপাতত কোনও গাছ কাটা যাবে না। তবে রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড মেট্রো রেলের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।
বিচারপতি বি আর গাভাই, বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথন ও বিচারপতি প্রশান্ত কুমার মিশ্রের বেঞ্চে আজ এই মামলার শুনানি ছিল। সেখানে ‘পাবলিক’-এর তরফে আইনজীবী জয়দীপ গুপ্ত যুক্তি দিয়েছেন, মেট্রো রেল তৈরি হবে না এমন কথা মামলাকারীরা বলছেন না। মেট্রোর কাজের জন্য ৯২৩টি দীর্ঘ ও প্রাচীন বৃক্ষ উপড়ে ফেলা হচ্ছে। এর মধ্যে মাত্র ২৯টি গাছ কাটার জন্য মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ বন দফতরের অনুমতি নিয়েছে। কিন্তু বাকি সব গাছ তুলে নিয়ে অন্যত্র রোপণ করা হচ্ছে যুক্তি দিয়ে অনুমতি নেওয়া হয়নি। বাস্তবে ওই সব গাছ পুরনো জায়গা থেকে অনেক দূরে রোপণ করা হচ্ছে। হাই কোর্ট বুঝতে পারেনি যে ময়দান এলাকা থেকে এই সব গাছ চিরতরে ফুরিয়ে যাবে। কারণ এক জায়গা থেকে গাছ তুলে অন্য জায়গায় পোঁতা হলেও তা খুব বেশি বাঁচে না। বিচারপতি গাভাই অবশ্য বলেন, অন্য জায়গায় পোঁতা হলেও গাছ বাঁচে।
কেন্দ্রের হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা যুক্তি দেন, ৮২৭টি গাছ অন্য জায়গায় রোপণ করার প্রস্তাব রয়েছে। ৯৪টি গাছ অন্যত্র রোপণ করা হচ্ছে। গাছ কাটার ক্ষতিপূরণ হিসেবে নতুন ২,৩৭০টি গাছ পোঁতা হবে। তাঁর নিজের বাড়িতে অন্য জায়গা থেকে তুলে আনা গাছ পোঁতার পরে তা বেঁচে গিয়েছে বলেও যুক্তি দেন মেহতা। রেল বিকাশ নিগমের যুক্তি, যে হেতু গাছ তুলে অন্য জায়গায় পোঁতা হচ্ছে, তাই তার কোনও অনুমতির প্রয়োজন নেই। কেন্দ্র যুক্তি দেয়, এই মেট্রো তৈরি হলে রাস্তায় যানজট কমবে। এই মেট্রো কলকাতার মানুষের জীবনরেখা হয়ে উঠবে। জনস্বার্থ মামলাকারীদের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মেহতা। জয়দীপ বলেন, ময়দান কারও একার সম্পত্তি নয়। তাই এর সঙ্গে জনস্বার্থই জড়িত। বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, মামলাকারীদের আশঙ্কা দূর করতে পরিবেশ মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গাছ কাটার বিষয় খতিয়ে দেখবে। তাদের অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না বা তুলে অন্যত্র পোঁতা যাবে না।