‘স্বাস্থ্যসাথী’ নিয়ে মত মেলেনি, হতাশ নবান্ন

বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলির এ হেন আচরণে কার্যত হতাশ নবান্ন। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্যে দু’হাজারের বেশি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম আছে।

Advertisement

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২৯
Share:

ফাইল চিত্র।

রাজ্যের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প নিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির মতামত জানতে তিন বার নোটিস পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য কমিশন। চার মাস পরে দেখা গিয়েছে, সাড়া দিয়েছে মাত্র ২১টি! বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে চিকিৎসা-মূল্য বেঁধে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য প্রশাসন, এই তথ্য উঠে আসায় তা গোড়াতেই ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ।

Advertisement

বেসরকারি চিকিৎসা খরচে সামঞ্জস্য আনতে সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পকে ‘মডেল’ করতে চায় রাজ্য। এই কারণে গত ২৬ মে প্রথম নোটিস দিয়ে তাদের মতামত জানতে চেয়েছিল কমিশন। সেখানে ২২ জুনের মধ্যে মতামত জানাতে বলা হয়েছিল। কোনও সাড়া না পেয়ে ২৭ জুন আর এক দফা নোটিস দিয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়। তাতেও সন্তোষজনক সাড়া না মেলায় ফের ১৫ অগস্ট পর্যন্ত সময় দেয় কমিশন। তার পরেও মাত্র ২১টি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম নিজেদের মতামত জানিয়েছে।

বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলির এ হেন আচরণে কার্যত হতাশ নবান্ন। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্যে দু’হাজারের বেশি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম আছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় সরকার যে চিকিৎসা-মূল্য দেয়, তাতে কারও আপত্তি আছে কি না, থাকলে কেন— তার উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল চিকিৎসা প্রতি‌ষ্ঠানগুলিকে। কিন্তু একাধিক বার আবেদন করে এত কম সাড়া সত্যিই আমাদের ভাবনার বাইরে ছিল।’’

Advertisement

কমিশনও ভাবেনি এত কম সাড়া মিলবে। তাই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে দু’টি কমিটি গড়েছে কমিশন। একটি হাসপাতালের চিকিৎসা বহির্ভূত খরচ যাচাই করবে। অন্যটি চিকিৎসা ও নানা রকম শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ খতিয়ে দেখবে। কমিশনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘আমরা কী করছি, তা বিস্তারিত বলব না। এটুকু বলতে পারি, পরবর্তী পদক্ষেপ নির্দিষ্ট করতে কমিশন কাজ করছে।’’

কিন্তু সাড়া এত কম কেন? দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘চিকিৎসা-মূল্য শুধুই চিকিৎসকের ফি ও অপারেশনের খরচের উপরে নির্ভর করে না। যন্ত্রপাতির মান, পারিপার্শ্বিক সুবিধা-সহ বিবিধ পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করে।’’ হাওড়ার এক নার্সিংহোমের মালিক বলেন, ‘‘আমরা যেমন পরিষেবা দিই, তেমন টাকা নিই। আর লাভ তো রাখতেই হবে। কত নেতার অনুরোধে প্রতিদিন কত রোগীর চিকিৎসার খরচ কমাতে হয়, সে খবর কে রাখে?’’ স্বাস্থ্য দফতরের পাল্টা যুক্তি ‘‘কলকাতার বহু বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসা দেয়। তা হলে কেন ওই প্রকল্পের বাইরে সাধারণ মানুষ একই সুবিধা পাবেন না?’’

বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির একটা বড় অংশ রোগীর বাড়ির লোকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে চিকিৎসার খরচ আদায় করে— রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নবান্নে এ রকম ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা পড়ার পরে গত ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই খোলা বৈঠকে তিনি একাধিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। খেয়ালখুশিমতো টাকা আদায় যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, তা-ও স্পষ্ট করে দেন। এর পরেই নবান্ন সিদ্ধান্ত নেয়, চিকিৎসার মান ও সুযোগ-সুবিধে যাচাই করে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির চিকিৎসা-মূল্যে সামঞ্জস্য আনবে সরকার। স্বাস্থ্য কমিশন সেই কাজ করবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement