ছাত্র-মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। অথচ, সেই ঘটনায় স্কুলের শিক্ষকদের দায়ী করে মৃতের পরিবারকে মোটা টাকা দিতে ‘চাপ’ দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে ‘বিদ্যালয়ে রাজনৈতিক দলের বিচার মানছি না, মানব না’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তা অবরোধে নামল পড়ুয়ারা।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার মড়ার সম্মিলনী হাইস্কুলের ঘটনা। মঙ্গলবার ওই স্কুলের কয়েকশো ছাত্রছাত্রী প্রায় এক ঘণ্টা বাঁকুড়া-মেদিনীপুর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। শেষে প্রধানশিক্ষকের কথায় অবরোধ ওঠে।
ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র দেবচাঁদ সরকার (১১) শুক্রবার স্কুলে অসুস্থ হয়। এক ছাত্রের সঙ্গে তাকে বাড়ি পাঠান স্কুল কর্তৃপক্ষ। শনিবার অসুস্থতা বাড়ায় দেবচাঁদকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। রবিবার সে মারা যায়।
মৃতের বাবা পূর্ণ সরকারের দাবি, ‘‘শিক্ষকদের মারে ছেলের পেটে চোট লাগে। ডাক্তারেরা আমাকে বলেছেন, কিডনি ও মূত্রথলিতে আঘােতই ছেলে মারা গিয়েছে।’’ মারধরের অভিযোগ উড়িয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, খেলাধুলোর ক্লাসে ফুটবল খেলতে গিয়ে চোট লেগেছিল ছেলেটির।
এই চাপান-উতোরের মধ্যে মৃত ছাত্রের পরিজনেরা সোমবার স্কুলে চড়াও হয়ে শিক্ষকদের গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ। সঙ্গীদের নিয়ে সেখানে হাজির হয়ে মড়ার পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সাগর সাউ দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। প্রধান শিক্ষক স্বপনকুমার মণ্ডলের ক্ষোভ, ‘‘দেবচাঁদের বাবা খেতমজুর। তাই দুঃস্থ পরিবারটিকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা আর্থিক সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আলোচনা চলার সময় কিছু লোকজন যে ভাবে আমাদের গালিগালাজ করে মোটা টাকা দেওয়ার জন্য চাপাচাপি করছিল, তা অনেকেরই গায়ে লেগেছে।’’ অবরোধে নামা পড়ুয়াদেরও বক্তব্য, ‘‘দেবচাঁদ মারা যাওয়ায় দুঃখ পেয়েছি। কিন্তু ওর বাড়ির লোকের হয়ে বলতে এসে রাজনৈতিক নেতারা শিক্ষকদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন, তাতে আরও বেশি দুঃখ পেয়েছি।’’
শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির অনধিকার প্রবেশ নিয়ে বারবার কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি সঙ্গীদের নিয়ে স্কুলে বৈঠক করতে গেলেন কেন? প্রধানের বক্তব্য, ‘‘এলাকার স্কুলে গণ্ডগোল হয়েছিল বলে গিয়েছিলাম। স্কুলে ফুটবল খেলতে গিয়ে বাচ্চাটার লেগে থাকলেও, তার চিকিৎসায় দুঃস্থ পরিবারটির যে খরচ হয়েছিল—তা-ই দিতে অনুরোধ করা হয়েছিল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। মোটা টাকা দিতে চাপাচাপি করা হয়নি।’’