উদ্বেগজনক: বছরের শেষ দিনে বিধি-ভাঙা ভিড় দিঘার সৈকতে। নিজস্ব চিত্র
শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে শুক্রবার মালদহের গৌড়ে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। অধিকাংশের মুখেই মাস্ক নেই। কেন নেই, জানতে চাওয়ায় এক মহিলা বলে দিলেন, ‘‘টিকার দু’টো ডোজ়ই নেওয়া আছে। তাই সব সময় মাস্ক পরছি না। তবে সঙ্গে রয়েছে।”
উদ্বেগ-আশঙ্কা এক দিকে। হুল্লোড়-আমোদ অন্য দিকে। শুক্রবার, বছর শেষের দিনটিতে দাঁড়িপাল্লায় পাল্লা ভারী রইল হুল্লোড়েরই। লাগামছাড়া ভিড়ের পরিণতি কী হবে, তার পরোয়া না-করে জেলায় জেলায় পার্কে ভিড় হল, বনভোজনের আনন্দে মাতল আমজনতা, রাত বাড়তেই বড় শহরের রেস্তরাঁ, নাইট ক্লাবে চলল পার্টি। হুল্লোড়ে উবে গেল কোভিড-বিধি। দেখে কে বলবে, রাজ্যের করোনা সংক্রমণ দু’হাজার ছাড়িয়েছে! আজ, ১ জানুয়ারি ভিড় আরও বাড়ার আশঙ্কা। তবে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গিয়ে কেউ যাতে বেলাগাম না-হন, কোভিড বিধি মেনে চলেন, সেটা দেখতে তৈরি পুলিশ-প্রশাসনও।
উত্তর থেকে দক্ষিণ, ভিড় উপচে পড়েছে পর্যটনস্থলগুলিতে। শুক্র, শনি ও রবিবারের ছুটি সেই ভিড় আরও বাড়িয়েছে। দু’দিন আগেই বরফের চাদরে মুড়েছিল দার্জিলিং। করোনা, ওমিক্রন আতঙ্কের মধ্যেও বছরের শেষ দিনে চেনা ছবি দার্জিলিং ম্যালে। অধিকাংশ পর্যটকেরই মুখে মাস্ক নেই। একই ছবি কার্শিয়াং, কালিম্পংয়ে। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের জঙ্গলে কিংবা লাটাগুড়ি, মানসাই, মূর্তিতেও পর্যটকদের ভিড়ে উধাও পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি। শৈল শহরের চেয়ে ছবিটা মোটেও আলাদা ছিল না দক্ষিণের সৈকত শহর দিঘায়। স্নানের ভিড়ে উধাও সব বিধি। দিঘার হোটেল মালিকদের সংগঠনের তরফে যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী নিজেই মানছেন, ‘‘সন্ধ্যার পর থেকে সৈকতে তিল ধারণের জায়গা নেই।’’ তবে তৎপর ছিল পুলিশ। এসডিপিও (কাঁথি) সোমনাথ সাহা বলেন, ‘‘মাস্ক পরার জন্য বারবার মাইকে প্রচার চলছে। তবে দিঘা, মন্দারমণিতে দীর্ঘ সৈকতের কারণে কিছু কিছু এলাকায় পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণ করতে একটু সমস্যা হচ্ছে।’’
সুন্দরবনের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রেই প্রচুর ভিড় হয়েছে। বেশির ভাগেরই মাস্ক ছিল না। বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর, বিষ্ণুপুর থেকে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় বা গড়পঞ্চকোট, সর্বত্র এ দিন পর্যটকের ঢল নামলেও অন্য বছরের তুলনায় তা কম বলে পুলিশ-প্রশাসনের দাবি। প্রবল ভিড় দেখা গেল নদিয়ার মায়াপুর ইস্কন মন্দিরে। বিধি উড়িয়েই বিধি উড়িয়ে হুগলির ব্যান্ডেল চার্চ, ইমামবাড়া, সবুজ দ্বীপে ভিড় জমিয়েছিলেন পর্যটকেরা।
পিকনিকের ভিড়ও হয়েছে এ দিন। মেদিনীপুর শহরতলির কংসাবতী নদীঘাটের কাছে উচ্চগ্রামে ডিজে-বক্স বাজিয়ে অসংখ্য দল পিকনিক করেছে। কোনও কোনও দলে ছিলেন ১৫০ জনও। বীরভূমেও কোপাই নদীর ধারে, মশানজোড়ে প্রচুর পিকনিক হয়েছে। কারও মুখেই মাস্ক ছিল না। আবার ফুলেশ্বর সেচ বাংলো, শ্যামপুরের গড়চুমুক পর্যটনকেন্দ্র, মহিষরেখা-সহ হাওড়ার অন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে বর্ষশেষের ভিড় তেমন হয়নি। উত্তর ২৪ পরগনার জনপ্রিয় পিকনিক-স্পট টাকিতেও ভিড় কম ছিল। তেমন ভিড় চোখে পড়েনি নদিয়ার বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্য, কৃষ্ণনগর চার্চ, পশ্চিম পর্ধমানের মাইথন, দেউল-সহ বিভিন্ন পিকনিক স্পটে। বিধি মানা ব্যাপারে পুলিশের প্রচারও ছিল যথেষ্ট।