প্রতীকী ছবি।
ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে চিকিৎসকদের ‘ঘুষ’ দীর্ঘদিনের। সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করল কেন্দ্রের ‘ডিপার্টমেন্ট অব ফার্মাসিউটিক্যালসে’র নির্দেশ। সম্প্রতি কলকাতায় ‘ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রি অ্যাসোসিয়েশনে’র (আইপিএ) বার্ষিক সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে ওই নির্দেশিকায় ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার সংগঠনগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক।
কেন্দ্রের ওই মন্ত্রক সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ওষুধ সংস্থাগুলি চিকিৎসকদের সম্মেলনের খরচ জোগাচ্ছে বলে একটি অভিযোগ সম্প্রতি মন্ত্রকের কাছে জমা পড়েছে। অভিযোগ, পাঁচতারা হোটেলে ডাক্তারদের থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি সম্মেলনের শহর এবং আশপাশের দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে। এই ধরনেরই আয়োজন কলকাতায় ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলনে হয়েছিল বলে সতর্কবার্তায় জানিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক। এর পরেই সতর্কবার্তায় লেখা হয়েছে, চিকিৎসক সম্মেলনের নামে কোনও অনৈতিক কার্যকলাপ যাতে না-হয়, ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সংস্থাগুলি যেন ‘ইউনিফর্ম কোড ফর ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটিং প্র্যাক্টিসেস’ (ইউসিপিএমপি) বা অভিন্ন নিয়মবিধি মেনে চলে।
ওষুধ বেচতে চিকিৎসকদের ‘ঘুষ’ দেওয়া নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওষুধ সংস্থাগুলিকে সতর্ক করেছেন বলে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর বেরোয়। তার সমালোচনা করে পাল্টা বিবৃতি দেয় চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। কলকাতায় আয়োজিত সম্মেলনের অর্গানাইজ়িং সেক্রেটারি রঞ্জন ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার অর্থে আইপিএ-র সম্মেলন আয়োজনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। রঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘সম্মেলনের পুরো বিষয়টি দেখেছিল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। অর্গানাইজ়িং কমিটি শুধু হোটেলের ঘর ‘বুক’ করেছিল। সম্মেলন হয়েছে ‘কোড অব কনডাক্ট’ বা আচরণবিধি মেনেই।’’ আইএমএ-র সদ্য প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি তথা তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের বক্তব্য, কেন্দ্র দেশের চিকিৎসকদের প্রতি কী মনোভাব নিয়ে চলে, এই নির্দেশিকা তার প্রমাণ। ‘‘২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কুৎসা করেছিলেন। সম্প্রতি বলেছেন, ওষুধ কোম্পানিগুলি চিকিৎসকদের মহিলা পর্যন্ত সরবরাহ করে! অনৈতিক কাজ সমর্থন করি না। কিন্তু চিকিৎসকদের নিশানায় রেখে এমন নির্দেশিকা লজ্জাকর,’’ বলেন শান্তনুবাবু।
চিকিৎসকদের একাংশ কড়া সমালোচনা করলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের পদক্ষেপ যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির যৌথ মঞ্চ। ‘অল ইন্ডিয়া ড্রাগ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক’-এর সদস্যা মালিনী আইসোলা বলেন, ‘‘কড়া আইন না-করে ফার্মাসিউটিক্যাল বিভাগ এখনও নখদন্তহীন ইউসিপিএমপি মেনে চলতে অনুরোধ করছে! ডিওপি-র উচিত এমন একটি প্রক্রিয়া চালু করা, যাতে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি কী ধরনের অনৈতিক কাজকর্ম করে, তা অবিলম্বে প্রকাশ্যে আসে।’’