ক্ষুব্ধ চা-শ্রমিকদের আঙুল ব্যাঙ্কের দিকেও

তদন্ত এগোয়নি ভুয়ো অ্যাকাউন্টের

ওঁরা সবাই চা-শ্রমিক। লক্ষ টাকা দূর, এক সঙ্গে দশ হাজার টাকাও চোখে দেখেননি কখনও। অথচ, ওঁদের নামে বেসরকারি ব্যাঙ্কে খোলা অ্যাকাউন্টে হয়ে গিয়েছে লক্ষ-লক্ষ টাকার লেনদেন। শিলিগুড়ি থানার কাছে, স্টেশন ফিডার রোডে এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় এ ধরনের জালিয়াতির ব্যাপারে সপ্তাহ তিনেক আগেই অভিযোগ গিয়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ—দু’পক্ষের কাছে।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৫ ০৩:২৮
Share:

ওঁরা সবাই চা-শ্রমিক। লক্ষ টাকা দূর, এক সঙ্গে দশ হাজার টাকাও চোখে দেখেননি কখনও। অথচ, ওঁদের নামে বেসরকারি ব্যাঙ্কে খোলা অ্যাকাউন্টে হয়ে গিয়েছে লক্ষ-লক্ষ টাকার লেনদেন। শিলিগুড়ি থানার কাছে, স্টেশন ফিডার রোডে এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় এ ধরনের জালিয়াতির ব্যাপারে সপ্তাহ তিনেক আগেই অভিযোগ গিয়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ—দু’পক্ষের কাছে। কিন্তু আশ্বাস দিলেও কোনও তরফেই তদন্তে অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ। বিশেষ করে ব্যাঙ্ক কতৃর্পক্ষ আলাদা করে পুলিশের দ্বারস্থ না হওয়ায় সন্দেহ বাড়ছে শ্রমিকদের একটা বড় অংশের।

Advertisement

সম্প্রতি ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে লেনদেনের হিসেব (স্টেটমেন্ট) পাঠানো হয় নকশালবাড়ির মারাপুর চা বাগানের মহিলা-শ্রমিক সুগান ওঁরাওকে। সেই সূত্রেই জানাজানি হয়, ২০১৪-র ১৮ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুগানের নাম করে খোলা ভুয়ো অ্যাকাউন্টে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। তোলা হয়েছে ১০ লক্ষ। এর পরে ধরা পড়ে, মারাপুর বাগানের আর এক শ্রমিক শিবাণী লাকড়ার নামে একই শাখায় খোলা ভুয়ো অ্যাকাউন্টে প্রায় ২৪ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। মানঝা বাগানের মহিলা শ্রমিক মতিলাল তিরকের নাম ব্যবহার করে খোলা অ্যাকাউন্টে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১২ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। তোলা হয়েছে ৭ লক্ষ টাকা। তাঁর সহকর্মী রজিতা বার্লার নামেও একই ভাবে খোলা অ্যাকাউন্টে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১২ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। তোলা হয়েছে ৮ লক্ষ টাকা।

কিন্তু তিন সপ্তাহেরও বেশি আগে এই জালিয়াতির অভিযোগ পেয়েও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ আইনি প্রক্রিয়া শুরু না করায় শ্রমিকদের সন্দেহ বাড়ছে। বিধি অনুযায়ী, অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ে অন্তত এক বার গ্রাহককে সশরীরে ব্যাঙ্কে হাজির হতে হয়। সুগান, শিবাণীদের দাবি, তাঁরা কখনও ব্যাঙ্কের ওই শাখায় যাননি। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে একাধিক শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, ‘‘ব্যাঙ্কের কর্মীদের কারও যোগসাজশ ছাড়া এ ধরনের জালিয়াতি হওয়া সম্ভব নয়। তাই পুরো ব্যাপারটাই ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত ব্যাঙ্ক কতৃর্পক্ষ।’’

Advertisement

তাই কি? ব্যাঙ্কের ওই শাখার ম্যানেজার শঙ্কর ধরের জবাব, ‘‘একটা ভুল হয়েছে।’’ ভুল শোধরানোর জন্য তাঁরা কী করেছেন? শঙ্করবাবু জানাচ্ছেন, তাঁরা যে সব অ্যাকাউন্ট নিয়ে অভিযোগ পেয়েছেন, সেগুলি ‘ক্লোজ’ করে দিয়েছেন। তার মানে তো যারা ভুয়ো পরিচয়ে ওই অ্যাকাউন্টগুলি খুলেছিল, তারা টাকা তুলে নিতে পেরেছে? সরাসরি জবাব না দিয়ে শাখা ম্যানেজার বলেন, ‘‘বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে। সব রকম পদক্ষেপ করা হবে।’’

যদিও ওই বেসরকারি ব্যাঙ্ক সূত্রেই জানা গিয়েছে, বিধি অনুযায়ী, কেউ অন্যের নামে অ্যাকাউন্ট খুলেছে বলে অভিযোগ মিললে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে লেনদেন বন্ধ (ফ্রিজ) করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তদন্ত শুরু করা বাধ্যতামূলক। পুলিশকেও জানানো নিয়ম। বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্তার কথায়, ‘‘ম্যানেজারের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি পুলিশকে এখনও বিষয়টি না জানিয়ে থাকেন তা হলে অনেক সন্দেহই হতে পারে।’’

জালিয়াতির এ ধরনের অভিযোগ চিন্তায় ফেলেছে গোয়েন্দাদেরও। তাঁরা জানিয়েছেন, অতীতে কাশ্মীরের একাধিক জঙ্গি গোষ্ঠী ভুয়ো নামে অ্যাকাউন্ট খুলে টাকার লেনদেন করেছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের এনডিএফবি, বিএলটি, আলফা-র মতো জঙ্গিরাও একই ধরনের ছকে অভ্যস্ত। এ সব ক্ষেত্রে যাঁর নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, অনেক সময় তাঁকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করা হয়। কিন্তু কিছুই পাওয়া যায় না। সেই ব্যক্তির ভোগান্তিই সার হয়।

শ্রমিকেরা বলছেন, ‘‘পুলিশের তরফে সদর্থক পদক্ষেপ দেখলেও ভরসা হতো। কিন্তু মাস গড়াতে চললেও থানার উল্টো দিকের ওই ব্যাঙ্কে পুলিশ এখনও গিয়ে উঠতে পারেনি বলে শুনেছি। ভরসা পাব কোথা থেকে?’’ যদিও শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার দাবি, ‘‘আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তদন্তের ফল দেখে পরের পদক্ষেপ করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement