—প্রতীকী ছবি।
গত দেড় দশক ধরে রাজ্য রাজনীতির ভরকেন্দ্র নন্দীগ্রাম। ভোট মরসুমে সেখানে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ে। গত বিধানসভা নির্বাচনেও আগাগোড়া চর্চার কেন্দ্রে ছিল জমি আন্দোলনের ধাত্রীভূমি। তবে এ বার পঞ্চায়েত ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে সেই নন্দীগ্রামই নিরুত্তাপ!
দেওয়ালে ভোটের লিখন, নানা দলের পোস্টার-ব্যানার, পতাকায় সাজানো গাছ রয়েছে বটে, কিন্তু শুক্রবার নন্দীগ্রামে ঘুরে বোঝা গেল না যে, রাত পোহালেই ভোট। চায়ের দোকান থেকে ব্যস্ত বাজার— সর্বত্রই বরং আনাজপাতির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা বাসিন্দাদের। সেখানে ভোট-আলোচনার লেশমাত্র নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়েও সে ভাবে নেই ভোটের ব্যস্ততা। দু’-চার জন করে নেতা-কর্মী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন।
নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া বাজারে মিষ্টির দোকান রয়েছে নিমাই মাইতির। ২০২১ সালে প্রচার চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন পায়ে চোট পেয়েছিলেন, তখন নিমাই নিজের দোকান থেকে বরফ নিয়ে দিয়েছিলেন। এ বার অবশ্য ভোট দেবেন কি না, সংশয়ে নিমাই। বললেন, ‘‘ভোট মানেই মারামারি, হিংসা। এমন ভোটের দরকার কী? যদি সুস্থ, স্বাভাবিক পরিবেশে ভোট হয়, তবে ভোট দিতে যাব, নচেৎ নয়।’’ স্থানীয় গৃহবধূ কৃষ্ণা মণ্ডল প্রামাণিকও বলেন, ‘‘আদৌ ভোট দিতে যেতে পারব কি না, জানি না। তাই ভোট নিয়ে আলাদা কোনও উৎসাহ নেই।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনাজ বিক্রেতা আবার জুড়লেন, ‘‘ভোট আসবে-যাবে। কিন্তু আমাদের দিন কি বদলাবে! তাই ভোট নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই।’’
ভোট প্রস্তুতি অবশ্য থেমে নেই। এ দিন নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে সীতানন্দ কলেজ থেকে এবং নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে বিএড কলেজ থেকে ভোটকর্মীদের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। ডিসিআরসি কেন্দ্রে পাহারায় ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা মেনে নন্দীগ্রাম কলেজের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা দেখা যায়নি। তবে রাজনৈতিক দলগুলির বাগযুদ্ধ অব্যাহত। তৃণমূল বহিরাগত বাহিনী ঢোকাবে, অভিযোগ বিজেপির। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক মেঘনাদ পালের পর্যবেক্ষণ, ‘‘একটা দমবন্ধ করা পরিবেশ রয়েছে, ঠিক যেমন ঝড়ের আগে হয়। মানুষ ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছে। তাই ভোট নিয়ে উচ্ছ্বাস নেই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পরিতোষ পট্টনায়কের মতে, ‘‘ভয়-ভীতির পরিবেশ রয়েছে। গ্রামে গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রুট মার্চ করতে দেখা যায়নি। ফলে মানুষ ভরসা পাচ্ছেন না। তাই সবাই চুপচাপ। তবে ভোট দিতে পারলে অবস্থা বদলে যাবে।’’
নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ দিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘জলপথে আমরা পাহারা বসিয়েছি। লোক ঢুকতে দেব না। যারা আসবে, ফিরে যেতে পারবে না। ধরা পড়বে, লোক তৈরি আছে।’’ তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলছেন, ‘‘নিজেদের পরাজয় বুঝতে পেরে বিরোধীরাই নানা জায়গায় হিংসা ছড়াচ্ছে। তবে নন্দীগ্রামে বিপুল ভাবে এগিয়ে যাবে আমাদের দলই। বিধানসভায় পিছিয়ে থাকা এলাকাগুলিতেও এ বার ঘাসফুলের প্রার্থীরা জয়ী হবেন।’’