mukul roy

Narada Scam: মুকুলের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ নেই: সিবিআই

জবাবে সিবিআই সূত্র বলছে, তাঁরা নারদ-কাণ্ডে শুভেন্দুর বিরুদ্ধেও যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন। সিবিআই তাঁকে অভিযুক্ত করে চার্জশিটও পেশ করতে চায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২১ ০৬:১৫
Share:

ফাইল চিত্র।

দু’বছরের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের অনুমোদনই মেলেনি। ২০১৯-এর ৬ এপ্রিল থেকে লোকসভার স্পিকারের দফতরে সিবিআইয়ের আর্জি পড়ে রয়েছে। আর মুকুল রায়? সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার কোনও অনুমোদনই চায়নি। কারণ সিবিআইয়ের দাবি, মুকুলের বিরুদ্ধে নারদ কাণ্ডে টাকা নেওয়ার এখনও যথেষ্ট প্রমাণ নেই।

Advertisement

সোমবার সাতসকালে সিবিআই নারদ-মামলায় তৃণমূলের তিন মন্ত্রী, বিধায়ক ও প্রাক্তন মেয়রকে গ্রেফতারের পরে প্রশ্ন উঠেছে, একই মামলায় শুভেন্দু অধিকারী ও মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে সিবিআই কেন হাত গুটিয়ে বসে? তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে কি তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সব ‘ওয়াশিং মেশিন’-এ ধুয়ে গিয়েছে?

জবাবে সিবিআই সূত্র বলছে, তাঁরা নারদ-কাণ্ডে শুভেন্দুর বিরুদ্ধেও যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন। সিবিআই তাঁকে অভিযুক্ত করে চার্জশিটও পেশ করতে চায়। কিন্তু লোকসভার স্পিকারের কাছে ২০১৯-এর এপ্রিলে চার্জশিট পেশ করে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমোদন বা ‘প্রসিকিউশন স্যাংশন’ চাওয়া হলেও এখনও জবাব মেলেনি। শুধু শুভেন্দু নন। তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায়, কাকলি ঘোষদস্তিদার ও প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও একইদি নে চার্জশিট পেশের অনুমোদন চাওয়া হয়। কোনও ক্ষেত্রেই এখনও লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার অনুমোদন মেলেনি। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, ২০১৯-এর ৬ এপ্রিল অনুমতি চাওয়ার পরে, ফের ওই বছরেরই ১৯ অগস্ট ও ১৬ সেপ্টেম্বর স্পিকারের দফতরে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। গত দু’বছরে আরও দু’তিনবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন মেলেনি।

Advertisement

এ বিষয়ে আজ স্পিকারের দফতর মন্তব্য করতে চায়নি। শুভেন্দু এখন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা। মুকুল এখন বিজেপির অন্যতম সর্বভারতীয় সহসভাপতি। নারদ-কাণ্ডের সময় এক জন লোকসভার, অন্য জন রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। দু’জনেরই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার সময়ে অভিযোগ উঠেছিল, সারদা-রোজ ভ্যালি, নারদ কাণ্ডে গ্রেফতারি এড়াতেই তাঁদের দলবদল। তাঁরা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই নারদের স্টিং অপারেশনে শুভেন্দু-মুকুলের ভিডিয়ো বিজেপি নিজের যাবতীয় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে ফেলে।

শুভেন্দুর ক্ষেত্রে না হয় অনুমোদন মেলেনি। মুকুলের ক্ষেত্রে কী সমস্যা? সিবিআইয়ের বক্তব্য, মুকুলের ক্ষেত্রে সরাসরি নারদের স্টিং অপারেটর ম্যাথু স্যামুয়েলের থেকে টাকা নেওয়ার প্রমাণ মেলেনি। স্যামুয়েল আজ বলেছেন, তিনি শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করে ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। তিনি মুকুলের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু মুকুল সরাসরি নগদ টাকা নিতে চাননি। তিনি আইপিএস অফিসার এস এম এইচ মির্জাকে টাকা দিতে বলেন। স্যামুয়েলের বক্তব্য, তিনি মির্জাকে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। তাঁদের কথাবার্তার রেকর্ডিংও রয়েছে। যা থেকে প্রমাণ করা যায়, মির্জা মুকুলের হয়েই টাকা নিয়েছিলেন। স্যামুয়েলের দাবি, মির্জা সিবিআইয়ের জেরায় সে কথা স্বীকারও করেছিলেন। তার পরেও শুভেন্দু-মুকুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ হচ্ছে না দেখে স্যামুয়েল নিজেও অবাক। সিবিআই কর্তারা অবশ্য বলছেন, মুকুলের বিরুদ্ধে এখনও প্রমাণ নেই। তবে এই মামলায় তদন্ত চলছে।

সিপিএমের সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়ে এসেই স্পিকারের কাছে দরবার করেছিলেন। যাতে নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত সাংসদদের ‘প্রসিকিউশন স্যাংশন’ দেওয়া হয়। তাঁর বক্তব্য, এই অনুমোদন না পাওয়ার ফলে শুধু শুভেন্দু নন, তৃণমূলের তিন সাংসদও ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন। একই মামলায় কিছু অভিযুক্তর বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের হবে, কারও ক্ষেত্রে হবে না, সেটা ঠিক নয়।

সিবিআই কর্তাদের বক্তব্য, নারদ স্টিং অপারেশনের সময় শুভেন্দু, সৌগত, কাকলি, প্রসূন—চার জনেই লোকসভার সাংসদ ছিলেন। দুর্নীতি দমন আইনের ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনও জনপ্রতিনিধি বা সরকারি পদস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের আগে ‘প্রসিকিউশন স্যাংশন’ জরুরি। না হলে আদালত অভিযুক্তর বিরুদ্ধে চার্জশিট বিবেচনাই করবে না। একইসঙ্গে সিবিআই কর্তাদের যুক্তি, চার্জশিট পেশের জন্য অনুমোদনের দরকার হলেও কোনও সাংসদ-বিধায়ককে গ্রেফতারের জন্য লোকসভা বা বিধানসভার স্পিকারের অনুমতি নিতে হয় না। গ্রেফতারির পরে শুধু জানিয়ে দিতে হয়। ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্রদের গ্রেফতারির আগে তাই বিধানসভার স্পিকারের অনুমোদনের দরকার পড়েনি। লোকসভা-বিধানসভার চত্বর থেকে গ্রেফতার করলে তার অনুমতি দরকার পড়ত।

কিন্তু কংগ্রেস নেতা, আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, বিধানসভার স্পিকারের অনুমোদনের আগে গ্রেফতার করা যায় না। তা ছাড়া গ্রেফতারির প্রয়োজন থাকা দরকার। গ্রেফতারির ক্ষমতা রয়েছে বলেই সেটা বাধ্যতামূলক নয়। নারদ বহু পুরনো মামলা। এখনই জরুরি ভিত্তিতে গ্রেফতারির কী দরকার পড়েছিল? তাঁর বক্তব্য, “যাঁর পক্ষপাতমূলক আচরণ স্পষ্ট, সেই রাজ্যপালের অনুমোদনের ক্ষমতা রয়েছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। ২০১৬-র নারদ-কাণ্ডে এখন কেন অনুমোদন? প্রতিহিংসা, না কি ভোটের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement