ফাইল চিত্র।
আগাম অনুমতি নেওয়া তো হয়েছিলই। তার পাশাপাশি কলকাতা ও মুর্শিদাবাদের মোট তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে ৩০ সেপ্টেম্বর ভোট থাকায় দুর্গাপুজোয় বিভিন্ন ক্লাবকে অর্থসাহায্যের অনুষ্ঠানে ওই তিন এলাকার কোনও ক্লাবকে ডাকা হয়নি। তাই ভোটের আদর্শ আচরণবিধিও লঙ্ঘন করা হয়নি বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দিল নবান্ন।
পুজোয় ক্লাবগুলিকে অনুদানের সরকারি ঘোষণাকে হাতিয়ার করে কমিশনে অভিযোগ করেছে বিজেপি। অভিযোগ পেয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকার জবাব চায় কমিশন। নবান্নের খবর, কমিশনে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে রাজ্য জানিয়েছে, ওই অনুষ্ঠানে আচরণবিধি ভঙ্গ করা হয়নি। এই বিষয়ে অসন্তোষ গোপন না-করে দলীয় সভায় বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেন, কোনও বিধি ভাঙা হয়নি।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তিন কেন্দ্রে ভোট ঘোষণার পরে রীতি মেনে কমিশনের অনুমতি নিয়েই মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুজো উদ্যোক্তাদের নিয়ে সভা করেছিল। ওই বৈঠকে পুজোয় ক্লাবগুলিকে অনুদান-সহ নানা ধরনের সুবিধার কথা ঘোষণা করে সরকার। আদর্শ আচরণবিধি বলবৎ থাকাকালীন এই ঘোষণা নিয়ে আপত্তি তুলে ওই দিনেই কমিশনের দ্বারস্থ হয় বিজেপি।
প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, সভার অনুমতি চেয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব, তাই তাঁরই জবাব চায় কমিশন। জবাবে রাজ্য জানিয়েছে, ভবানীপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচন এবং মুর্শিদাবাদের দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট ঘোষণার দরুন সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির কোনও ক্লাবকে সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ঘোষণা হয়েছে ভবানীপুর-সহ তিন কেন্দ্রকে বাদ দিয়েই। পুজোর অনুদানও ওই সব এলাকার ক্লাবগুলিকে দেওয়া হচ্ছে না। নবান্নের অন্দরের বক্তব্য, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে মুখ্যসচিব সরকারের হয়ে কিছু ঘোষণা করতেই পারেন। এ ক্ষেত্রেও তিনি সুযোগ-সুবিধার কথা ঘোষণা করেছেন। তখন মঞ্চে ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার। মুখ্যমন্ত্রী তথা ভবানীপুরের প্রার্থী মমতা তখন অনুষ্ঠানে ছিলেন না। সরকারি ঘোষণা পর্ব মেটার পরে তিনি সভাস্থলে পৌঁছন। তাই সেটা নির্বাচনী আচরণবিধিকে আঘাত করছে না।
মমতা এ দিন দলীয় সভায় বলেন, ‘‘বিজেপি বেড়ালের মতো বসে আছে। কিছু একটা বললেই অভিযোগ করবে। মঙ্গলবার পুজোর সভায় কেন গিয়েছিলাম, তা নিয়েও প্রশ্ন! আমি কি এত বোকা? নতুন প্রকল্প ঘোষণা করব কেন? পুজো নিয়ে সমন্বয়ের বৈঠকে গিয়েছি, তাতেও প্রশ্ন। আবার ভোটের সময় এসে বলবে, লক্ষ্মী, সরস্বতী, দুর্গার পুজো করতে দেয় না!’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, কোনও পুজো কমিটি তাঁদের (সরকারের) কাছে ভিক্ষা চাইতে যায়নি। জোর করে তাদের ভিখারি সাজানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘পুজো কমিটিগুলিকে টাকা দিয়ে দিদির ছবি লাগাতে বাধ্য করানো হচ্ছে। আমরা বলেছি, নির্বাচনী বিধি বলবৎ হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী। তাই তিনি কোনও দানের প্রকল্পে যেতে পারেন না। আমাদের অভিযোগ কমিশনকে জানিয়েছি। তাঁর মনে পাপ আছে বলে জনগণকে উত্তর দিয়েছেন। উত্তরটা কমিশনকে দিন।’’
কমিশন সূত্রের খবর, আসন্ন ভোটে তিন কেন্দ্রের প্রতিটিতে ৮-১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকতে পারে। ভবানীপুর, শমশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর কেন্দ্রে এক জন করে ব্যয় পর্যবেক্ষক থাকবেন। সাধারণ পর্যবেক্ষকদেরও নজরদারির দায়িত্ব দিতে পারে কমিশন।