নীতি আয়োগের বৈঠকেও কি নেই মমতা, ধন্দ

রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনায় তিনি সর্বদা মুখর। রাজ্যের হাতে আরও বেশি আর্থিক ক্ষমতার দাবিতেও তিনি সারাক্ষণ সরব। কিন্তু দিল্লি-দরবারে গিয়ে সেই হক আদায়ের কেন্দ্র-রাজ্য বৈঠকে তিনি প্রায় কখনওই নেই। রাজ্য প্রশাসনের মাথা হিসেবে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় না-বসার এই ‘রেকর্ড’ সম্ভবত নীতি আয়োগের প্রথম বৈঠকেও অক্ষুণ্ণ রাখতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৪
Share:

রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনায় তিনি সর্বদা মুখর। রাজ্যের হাতে আরও বেশি আর্থিক ক্ষমতার দাবিতেও তিনি সারাক্ষণ সরব। কিন্তু দিল্লি-দরবারে গিয়ে সেই হক আদায়ের কেন্দ্র-রাজ্য বৈঠকে তিনি প্রায় কখনওই নেই। রাজ্য প্রশাসনের মাথা হিসেবে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় না-বসার এই ‘রেকর্ড’ সম্ভবত নীতি আয়োগের প্রথম বৈঠকেও অক্ষুণ্ণ রাখতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

এই বছরের প্রথম দিনেই যোজনা কমিশন তুলে দিয়ে নীতি আয়োগ গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানিয়েছিলেন, এর অন্যতম উদ্দেশ্য, উন্নয়ন পরিকল্পনায় রাজ্যগুলির মতামতকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া। আগামী রবিবার সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে প্রথম বার সেই নীতি আয়োগের বৈঠকে বসতে চলেছেন মোদী। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, তাতে সম্ভবত এ বারও প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠক এড়িয়ে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের দাবি, “বিজেপি-সরকার সত্যিই এ সব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে? আদৌ কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে? আমরা তা মনে করি না।” আবার রাজ্যের এক মন্ত্রী বলছেন, “আমাদের দাবি ছিল, নীতি-আয়োগে আন্তঃরাজ্য পরিষদের মতো সাংবিধানিক মঞ্চ রাখা হোক। কিন্তু তা মানা হয়নি। তাই তার পরেও সেখানে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে যাবেন কি না, সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীই সিদ্ধান্ত নেবেন।” ইঙ্গিত স্পষ্ট। বৈঠকে না-ও যেতে পারেন মমতা।

Advertisement

নীতি আয়োগের চেহারা কেমন হবে, তা নিয়ে ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ডাকা বৈঠকে মমতা যাননি। পাঠিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে। পরে দিল্লিতে এসেও দেখা করেননি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের সম্মানে রাষ্ট্রপতি ভবনের নৈশভোজ। ওই একবারই মোদীর সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেছিলেন তিনি। কিন্তু এ বারের বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতির সম্ভাবনা আরও বেশি করে নজর কাড়ছে মূলত দু’টি কারণেপ্রথমত, অনেকেই মনে করছেন, রাজ্যের জন্য আর্থিক দাবি আদায়ের ভিত তৈরিতে এই বৈঠক কাজে লাগাতে পারতেন তিনি। দ্বিতীয়ত, আগামী দিনে নীতি আয়োগকে তারা কী ভূমিকায় দেখতে চায়, সেই বিষয়েও মতামত দিতে পারত রাজ্য। বৈঠকে না-থাকলে, মমতা এই দুই সুযোগই হারাবেন।

নীতি আয়োগের জন্মের দিনেই মোদী বলেছিলেন, দেশের উন্নয়নে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে সঠিক আর্থিক নীতি তৈরিতে সাহায্য করতে মূলত ‘থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক’ হিসেবে কাজ করবে এই প্রতিষ্ঠান। সেখানে সামিল করা হচ্ছে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির লেফটেন্যান্ট গভর্নরদের।

প্রধানমন্ত্রীর বার্তা ছিল, উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি রাজ্যগুলিকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চান। যোজনা কমিশনের সঙ্গে নীতি আয়োগের সব থেকে বড় অমিল সেখানকার পরিচালন পরিষদে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গভর্নরদের উপস্থিতি। মোদীর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলাম বলে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন জানি। নীতি আয়োগ ঠিক সেটাই করবে।” ওই দিনই তিনি টুইট করেন, “সব পায়ের জন্য একই মাপের জুতোর নীতিকে বিদায়। ভারতের বহুত্ব ও বৈচিত্র্য মেনে কাজ করবে এই প্রতিষ্ঠান।”

তাই খোদ প্রধানমন্ত্রী যে নীতি আয়োগে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনার উপরে জোর দিচ্ছেন, সেখানে মমতার অনুপস্থিতির সম্ভাবনায় কপাল কোঁচকাচ্ছেন অনেকেই। তাঁদের প্রশ্ন, “ত্রিপুরার উন্নয়নকে পাখির চোখ করে বাম দলের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার পর্যন্ত রাজনৈতিক বিরোধ সরিয়ে মোদীর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসছেন। তা হলে মমতার আপত্তি কেন?” বিশেষত যেখানে রাজ্যের হাতে আরও বেশি আর্থিক ক্ষমতার দাবিতে তিনি সরব। নিয়মিত গলা ফাটিয়েছেন কেন্দ্রীয় করের ভাগ, পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে অনুদান, রাজ্যের যোজনায় সাহায্য ইত্যাদি বাবদ কেন্দ্রের কাছ থেকে আরও বেশি টাকা পেতে। কারণ, এই বিষয়গুলি নিয়েই তো নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে সরকারি সূত্রে খবর। সরকারি সূত্রই বলছে, ওই বৈঠকে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যে কমিশন রাজ্যগুলিকে আরও বেশি পরিমাণে কেন্দ্রীয় করের ভাগ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ তিনটি ঋণগ্রস্ত রাজ্যের সমস্যা সমাধানের উপায়ও রয়েছে কমিশনের সুপারিশে। অথচ সেই বৈঠকে মমতা না-থাকা মানে এ সব বিষয়ে মুখ খোলার সুযোগ হারানো।

ডেরেকের অবশ্য অভিযোগ, “নয়া প্রতিষ্ঠান তৈরির পরিকল্পনাই যখন আলোচনা ছাড়া হয়েছে, তা হলে এখন বৈঠক কেন?”

যে বৈঠকে মমতার যাওয়া নিয়ে এমন ধন্দ, তাকে কিন্তু অসম্ভব গুরুত্ব দিচ্ছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। নীতি আয়োগের কর্তারাই বলছেন, এই প্রতিষ্ঠানের হাতে অর্থ বণ্টনের ক্ষমতা থাকবে কি-না, তা নিয়ে কথা হবে। রবিবারের বৈঠকের আলোচ্যসূচি ঠিক করতে শুক্রবারই নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারপার্সন অরবিন্দ পানাগাড়িয়া, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি-সহ বিভিন্ন সদস্যের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মোদী। বস্তুত সেটিই নীতি আয়োগের প্রথম বৈঠক। এ জন্য সংসদ মার্গের নীতি আয়োগ ভবনে এখন নতুন রঙের পোঁচ পড়ছে। চারদিকে সাজ সাজ রব।

আর যদি শেষ পর্যন্ত সত্যিই না আসেন মমতা? দিল্লির এক রাজনৈতিক নেতার টিপ্পনি, “দেশে লগ্নির মানচিত্রে বাংলা নেই। ২৬ জানুয়ারির রাজপথে তার ট্যাবলো নেই। প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে আসেন না মুখ্যমন্ত্রী। চিন্তা করছেন কেন? না-থাকাই এখন আপনাদের রাজ্যের দস্তুর!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement