শাকিলের বোরখা ঘরে তল্লাশি গোয়েন্দাদের

শেষ পর্যন্ত বর্ধমান বিস্ফোরণে হত শাকিল আহমেদের বেলডাঙার বোরখা ঘরে তল্লাশি চালাল এনআইএ-র দল। রবিবার দুপুরে সাড়ে তিনটে নাগাদ এনআইএ-র দু’জন অফিসার বোরখা ঘরে তল্লাশি চালান। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া বেলডাঙা বড়ুয়ার মোড় থেকে মহ্যমপুর যেতে বড়ুয়া বাজারের মধ্যে দোতলায় ওই বোরখা ঘর। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ওই বোরখা তৈরির আড়ালে ষড়যন্ত্রের বীজ বুনত শাকিল ও তার দলবল।

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৭
Share:

বেলডাঙা ও লালগোলার মকিমনগরে।

শেষ পর্যন্ত বর্ধমান বিস্ফোরণে হত শাকিল আহমেদের বেলডাঙার বোরখা ঘরে তল্লাশি চালাল এনআইএ-র দল। রবিবার দুপুরে সাড়ে তিনটে নাগাদ এনআইএ-র দু’জন অফিসার বোরখা ঘরে তল্লাশি চালান। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া বেলডাঙা বড়ুয়ার মোড় থেকে মহ্যমপুর যেতে বড়ুয়া বাজারের মধ্যে দোতলায় ওই বোরখা ঘর। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ওই বোরখা তৈরির আড়ালে ষড়যন্ত্রের বীজ বুনত শাকিল ও তার দলবল। এ দিন বোরখা ঘরে তল্লাশি চালিয়ে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে টেলিফোন রাখার বাক্স, লাল মলাটের বেশ কয়েকটি বই, কিছু রসিদ, বেশ কিছু পুরনো খবরের কাগজ, বোরখায় লাগানো বোতামের কিছু ছোট ছোট কৌটো, একটি নীল রংয়ের প্যাকেট এবং এক্স-রে ফিল্ম (স্থানীয় বাজার থেকে কেনা)।

Advertisement

এ দিন বোরখা ঘরে তল্লাশি চালানোর পরে বাম দিক দিয়ে এনআইএ-র ওই দু’জন অফিসার তিন তলার ছাদে উঠে যান। সেখানে জলের ট্যাঙ্কেও তল্লাশি চালান তাঁরা। যদিও জলের ট্যাঙ্কের মধ্যে সন্দেহজনক কোনও কিছু ছিল না। পরে তিন তলা ছাদের উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে ক্যামেরায় বেশ কিছু ছবি তোলেন। পরে বোরখা ঘর থেকে বাজেয়াপ্ত করা জিনিসপত্র গাড়িতে তুলে বেলডাঙায় থানায় আসেন। সেখানে ঘণ্টা দুয়েক থাকার পরে বেলডাঙা ছেড়ে চলে যান। এনআইএ-র দল বেলডাঙা ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই স্বস্তি ফেরে বেলডাঙাবাসীর। কেননা, বোরখা ঘরে তল্লাশি না চালানোর ফলে গত কয়েক দিন ধরে উত্‌কণ্ঠা ছিল তাঁদের মধ্যে। বোরখা ঘরে তল্লাশি চালিয়ে হয়তো বিস্ফোরক কিছু মিলতে পারে বলে আশঙ্কাও ছিল। কিন্তু বিস্ফোরক জাতীয় কোনও কিছু উদ্ধার না হওয়ায় গত কয়েক দিনের ফিসফাস-গুঞ্জন মিলিয়ে যায়।

বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডের পরে তদন্ত চিত্রে উঠে আসে বেলডাঙার নাম। গত কয়েক দিন ধরে এনআইএ বেলডাঙার বিভিন্ন মহল্লায় তল্লাশি চালালেও বাদ ছিল ওই বোরখা ঘর। তার মধ্যে মাঝের দুটো দিন শুক্র ও শনিবার এনআইএ-র দল তল্লাশি করেনি। ফলে বেলডাঙার বিভিন্ন মোড়ের চায়ের দোকানে, পাড়ার মাচায়, জলের লাইনে দাঁড়িয়েও আলোচনা চলেছেশেষ পর্যন্ত বোরখা ঘরে কি তল্লাশি চলবে না!

Advertisement

বোরখা ঘরের মার্কেট কমপ্লেক্স-এর সামনের চায়ের দোকান মালিক আনোয়ার শেখও বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে ওই বোরখা ঘর নিয়ে বেলডাঙাবাসী নিজেদের মধ্যে তুমুল তর্ক-বিতর্কে মেতে ছিল।” গত কয়েক দিন ধরে এনআইএ-র দল বেলডাঙা দাপিয়ে বেড়ানোর ফলে ওই আলোচনা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। কিন্তু শুক্রবার ও শনিবার দু’দিন এনআইএ-র দল বেলডাঙায়ার ওই বোরখা ঘরে তল্লাশি না চলানোর ফলে এলাকাবাসীর ধারণা হয়েছিল--কী এমন হলো যে বরখা ঘরে তল্লাশি চালানোর প্রয়োজন মনে করল না এনআইএ-র দল। স্কুল পড়ুয়া থেকে শিক্ষক, এমনকী সাধারণ মহিলাদেরও আলোচনার বিষয় ছিল বোরখা ঘর।

চলছে এনআইএ-র তল্লাশি।

শাকিলের কারখানা থেকে একটি সবুজ রঙের প্যাকেট, ঘর ভাড়া নিয়ে যেখানে থাকত সেখান থেকে একটি বড় ব্যাগ, ধর্মীয় পুস্তিকা, বোরখা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ, ধানের তুঁশ উদ্ধার করে গোয়েন্দারা। বেলডাঙার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আগে যেখানে শাকিল ঘর ভাড়া নিয়ে থাকত, সেখানে কিছু দিন আগেও তার সঙ্গী-সাথীরা থাকত বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে। এনআইএ-র দল জেনেছে। সেই বাড়ির মূল গেটের উপরের ফাঁকা জায়গায় এখনও পর্দা টাঙানো রয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের শাকিল ও তার সঙ্গী-সাথীদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা। সেখান থেকেই গোয়েন্দারা জানতে পারেনবাড়িতে তালা লাগিয়ে শাকিল ও তার সঙ্গীরা উল্টো দিকের একটি বাড়িতে চাবি রেখে দিয়ে যেত। ওই বাড়ির মহিলাদের জিজ্ঞাসা করা হয়। পরে এনআইএ-র দল থানায় দেখা করারও নির্দেশ দেয়। ওই বাড়ির সদস্যদের জেরা করে বলেও জানা গিয়েছে। কিন্তু কোনও নতুন তথ্য উঠে আসেনি।

এ দিন লাল ইনোভা গাড়ি চড়ে এনআইএ-র দল দুপুর তিনটের পরে বেলডাঙা থানা চত্বরে পৌঁছান। সেখানে পুলিশের সঙ্গে আলোচনার পরে তাঁরা বেরিয়ে যান বোরখা ঘরের দিকে। ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে ওই বোরখা ঘরের তালা অনেক কষ্টে ভাঙার পরে ভেতরে ঢুকে তল্লাশি চালান এনআইএ-র দল।

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement