গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
শর্ত সাপেক্ষেও রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজো করা যাবে না। জাতীয় পরিবেশ আদালতের এই রায়ে পরিবেশকর্মীরা খুশি হলেও, রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চাপনউতোর। রায় শোনার পর ধর্মীয় আবেগের পক্ষে সওয়াল করেছেন রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কেএমডিএ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পরিবেশ রক্ষার বদলে ধর্মীয় আবেগের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ায় তোপ দেগেছে বিরোধী দল থেকে শুরু করে পরিবেশকর্মীরা।
কেএমডিএ-র তরফে আবেদন জানানো হয়েছিল, শর্ত সাপেক্ষে সরোবরে ছট পুজো করতে দেওয়া হোক। বৃহস্পতিবার সেই আবেদন খারিজ করে দেয় জাতীয় পরিবেশ আদালত। জীব-বৈচিত্রে ভরা সরোবরের পরিবেশ রক্ষায় বার বার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। গত বছর সরোবরে ছট পুজোয় নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তা সত্ত্বেও পুলিশ-প্রশাসনের সামনেই জোর করে ঢুকে পড়েছিলেন ভক্তরা। চলেছে পুজোপাট।
রায় ঘোষণার পুর ও নগরন্নোয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হামিক বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক। বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হল না। এক দিনের জন্য শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া যেত। ধর্মীয় আবেগ রয়েছে। আমরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হব।”
আরও পড়ুন: চিনা নজরদারির তদন্ত-রিপোর্ট ৩০ দিনেই, জানালেন বিদেশমন্ত্রী
যদিও পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে ধর্মের বিষয়টিকে জুড়ে দেওয়ার কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না পরিবেশকর্মীরা। রবীন্দ্র সরোবরের আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে যুক্ত রয়েছেন সুভাষ দত্ত। তিনি বলেন, “এটা ধর্মের প্রশ্ন নয়। পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। এর থেকে অন্য কোনও যুক্ত হতে পারে না।” একই মত পরিবেশকর্মী নব দত্তের। তিনি বলেন, “জাতীয় পরিবেশ আদালতের এর এই রায় রাজ্য সরকার কতটা মান্যতা দেবে, জানি না। আগেও এমন রায় এসেছে। বিকল্প কোনও ব্যবস্থার ব্যবস্থা হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়রাই তো সরোবর বাঁচাও আন্দোলন করেছেন। এখানে ধর্মীয় আবেগের কথা কেন আসবে।”
বিজেপি অবশ্য পূণ্যার্থীদের কথা মাথায় রেখে সমন্বয়ের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে। ভোটের কথা মাথায় রেখেই ধর্মীয় আবেগের কথা বলা হচ্ছে জানান বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “মন্ত্রী বলছেন সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। বিচারাধীন বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। বিহারী এবং বাঙালিদের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা চলছে ভোটের কথা ভেবে।” একই সুর শোনা গেল সিপিএম নেতা সুজন চত্রবর্তীর গলায়। তাঁর কথায়: “ভোটের জন্য সমস্ত রকমের আবেগ দেখাচ্ছে। এ ভাবে চললে রাজ্যকে ছারখার করে দেবে তৃণমূল। বিজেপির রাজনীতিতেই পা গলাচ্ছে ওঁরা।”
আরও পড়ুন: ৩৩ শতাংশ দিল্লিবাসীর দেহে মিলেছে কোভিডের অ্যান্টিবডি, দাবি সেরো-সমীক্ষায়
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরিরও স্পষ্ট বক্তব্য এ বিষয়ে। তিনি বলেন, “ছট পুজোর নামে ভোট পুজো হচ্ছে। সরোবরের পরিবেশ ভয়ঙ্কর ভাবে নষ্ট হচ্ছে। শহরের মানুষ সেখানে হেঁটে বেড়ান। সব সম্প্রদায়ের মানুষই প্রাতর্ভ্রমণ করেন। সরোবরের দূষণ হলে সকলেরই ক্ষতি।”