গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
ব্যাঙ্ক জালিয়াতি নিয়ে সতর্কতা বৃদ্ধি সত্ত্বেও নিত্য নতুন পদ্ধতিতে টাকা লোপাটের ঘটনা চলছে। এখন নতুন এক পদ্ধতিতে জালিয়াতেরা মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে টাকা লোপাটের চেষ্টা করছে। এত দিন জালিয়াতেরা মূলত ফোন করে নানা বিষয়ে ভয় দেখিয়ে গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য নিয়ে নিত। কাউকে বড় অঙ্কের ক্রেডিট কার্ডের বিল এসেছে বলা, কাউকে সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা বলা বা মোবাইল ফোনের সিম বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখানো হত। একই ভাবে জীবন বিমা কিংবা অন্য সংস্থার এজেন্ট সেজে ফোন করা হত। এখন নতুন পদ্ধতিতে ভয়ের কথা শোনানো হচ্ছে। সাধারণ ভাবে ‘রেকর্ডেড ভয়েস’কে বিশ্বাস করেন মানুষ। সেই সুযোগটা নিয়েই ‘রেকর্ডেড ভয়েস’-এর মাধ্যমে কিছু বার্তা দেওয়ার পর কাস্টমার কেয়ারের জন্য নির্দিষ্ট নম্বর টিপতে বলা হচ্ছে। এর পরে জালিয়াতরা বিশ্বাস অর্জন করে ব্যাঙ্কের তথ্য থেকে ওটিপি জেনে নিচ্ছে।
সম্প্রতি এমন অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে সাইবার ক্রাইম রুখতে গড়া সরকারি পোর্টালে। আবার সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ দায়ের করে দেওয়ার কথা বলেও সাধারণের বিশ্বাস অর্জন করছে জালিয়াতেরা। একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে জালিয়াতেরা লোক ঠকানোর কাজ শুরু করেছে। কোনও ফোনে কয়েক সেকেন্ড কথা বললেই তা রেকর্ড করে নিয়ে সেই কণ্ঠস্বর ব্যবহার করা হচ্ছে। কোনও ব্যক্তির কণ্ঠস্বর মিলিয়ে কোনও বার্তা তৈরি করে তা পাঠানো হচ্ছে পরিচিত বা আত্মীয়দের। এই ভাবে বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টাও চলছে জালিয়াতদের তরফে।
ইতিমধ্যেই এমন ফোন পেয়েছেন যাঁরা, তাঁদের সকলেরই দাবি, রেকর্ডিং মেসেজ থেকে গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে ৯ টিপতে বলা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সংস্থার কাস্টমার কেয়ার পরিষেবার ক্ষেত্রে সাধারণত ৯ টিপেই প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। ফলে জালিয়াতেরা অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন করে নিচ্ছে সহজে।
তবে এই বিপদ থেকে বাঁচতে পাঁচটি নিয়ম মেনে চলা খুবই জরুরি।
১। কোনও অপরিচিত নম্বরের ফোন এলে সতর্ক থাকা। যে কোনও লিঙ্কে ক্লিক না করা। এটাও মনে রাখা দরকার যে, কোনও ব্যাঙ্ক বা বিশ্বস্ত সংস্থা মোবাইল নম্বর থেকে সরাসরি গ্রাহককে ফোন করে কোনও তথ্য চায় না।
২। ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকা। ওটিপি মুখে না বলা। এটাও মনে রাখা যে, টাকা নেওয়ার জন্য ওটিপি-র প্রয়োজন হয় না।
৩। যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেশি টাকা থাকে, সেটি ডিজিটাল লেনদেনের জন্য ব্যবহার না করাই শ্রেয়। যেটুকু টাকা না রাখলেই নয়, সেটুকু রাখাই সঙ্গত। কারণ, কোনও ভুলে টাকা খোয়া গেলেও কম ক্ষতি হবে।
সরকার এবং প্রশাসনের পক্ষে বারংবারই জালিয়াতি থেকে বাঁচার সব চেয়ে বড় উপায় হিসাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়। কারণ, সতর্ক গ্রাহককে ফাঁদে ফেলতে পারে না কোনও জালিয়াত। কোনও প্রলোভন দেখালেও কে এবং কোথা থেকে ফোন করেছে, তার বিশ্বাসজনক উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত কোনও রকম তথ্য না দেওয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত।