অধীর চৌধুরী। —ফাইল ছবি।
সাংগঠনিক পালাবদলের সময়ে ফের নাটকীয় মোড় এল কংগ্রেসে! বাংলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে ‘প্রাক্তন’ বলে উল্লেখ করেছিলেন এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীর। ক্ষোভের সুরে অধীর এ বার বললেন, কী ভাবে তিনি ‘প্রাক্তন’ হয়ে গেলেন, নিজেই বুঝতে পারছেন না! বাংলায় যাঁদের মাঠে-ময়দানে দলের হয়ে দেখা যায়, তাঁদের অনেককেই কেন দিল্লির বৈঠকে ডাকা হয়নি, সেই প্রশ্নও তুললেন ‘প্রাক্তন’ প্রদেশ সভাপতি। দলের সঙ্গে যে ভাবে সংঘাতের আবহ রেখে চলছেন অধীর, তাতে কংগ্রেসের শীর্ষ স্তরে প্রশ্ন উঠছে, বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন কোনও চিত্রনাট্য কি রচনা হচ্ছে!
অধীর মঙ্গলবার যা বলেছেন, তাতে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের আচরণে তাঁর অভিমান বা ক্ষোভ স্পষ্ট। লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের তরফে খড়্গে এক বার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ নিয়ে প্রদেশ সভাপতিকে ভর্ৎসনার সুরে বলেছিলেন, হাই কম্যান্ডের ‘লাইন’ না-মানলে তাঁকে বাইরে চলে যেতে হবে। সেই ঘটনায় ‘আহত’ হয়েছিলেন অধীর। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ইস্তফা-পর্ব। অধীরের কথায়, ‘‘আমি খড়্গেজি’র কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলাম। উনি দিল্লি এসে আলোচনা করতে বলেন। বলেছিলেন, কথা বলবেন। ওঁর সঙ্গে এর মধ্যে আর সাক্ষাৎ হয়নি। আমি এ বার বৈঠকে (সোমবার এআইসিসি দফতরে) গিয়ে দেখলাম, আমাকে প্রাক্তন সভাপতি হিসাবে অভিহিত করা হল! কিন্তু আমার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে কি না, এখনও আমি তা জানি না।”
তাঁর ইস্তফা মঞ্জুরের বিষয়ে মীরের কাছে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য আছে কি না, তা তিনি জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন অধীর। এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক মীর এবং সহ-পর্যবেক্ষক বি পি সিংহ এখন ‘রাজ্যটা চালাচ্ছেন’ বলে দাবি করে তাঁরা কতটুকু বাংলাকে চেনেন, সেই প্রশ্নও তুলে দিয়েছেন গত লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা। একই সঙ্গে অধীর মনে করছেন, লোকসভার দলনেতার পদে না থাকার ফলে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে তাঁকে আর না রাখাও হতে পারে।
লোকসভা ভোটের পরে একাধিক বার প্রশ্নের মুখে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন, তিনি ইস্তফা দেননি। তবে খড়্গে সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার পরে রাজ্যে নতুন করে কমিটি গঠন না হওয়ায় তিনি ‘অস্থায়ী’ প্রদেশ সভাপতি। কিন্তু বাংলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে অধীরের উপস্থিতিতেই মীর সোমবার জানিয়েছিলেন, প্রদেশ সভাপতি ইস্তফা দিয়েছেন খড়্গের কাছে। সেই তথ্য মেনে নিয়েই অধীর এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন, দলের শিষ্টাচার নিয়ে। ইস্তফা গৃহীত হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে তাঁকে কিছু জানানো হল না অথচ মীর বলে দিলেন— এই ঘটনায় অসম্মানের প্রসঙ্গ এনেছেন। দলের একাংশের প্রশ্ন, নির্বাচনে বিপর্যয়ের পরে যে কোনও রাজ্যে সভাপতির ইস্তফা স্বাভাবিক ঘটনা। ইস্তফা নিয়ে এত ধোঁয়াশা কেন তৈরি করা হচ্ছে? পাশাপাশিই, খড়্গের দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, অধীর যে ভাবে কার্যত ‘অপমান গায়ে মাখছেন’, তাতে প্রশ্ন উঠছে, ভবিষ্যতে অন্য কোনও প্রেক্ষাপট কি তৈরি হচ্ছে? সর্বভারতীয় সভাপতির দফতর সূত্রেই আরও বলা হচ্ছে, ভোটের সময়ে খড়্গের মন্তব্যের পরে কলকাতায় যে ভাবে তাঁর ছবিতে কালি মাখানো হয়েছিল, অধীরের সম্মানের কথা ভেবেই সেই ঘটনায় দলীয় স্তরে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। অথচ ওই ঘটনা যথেষ্ট ‘গুরুতর’ ছিল।
বাংলার কংগ্রেসের যে নেতারা আন্দোলন করেন, মার খান, তাঁদের অনেককে কেন ডাকা হয়নি, সেই প্রশ্নও তুলেছেন ‘প্রাক্তন’ প্রদেশ সভাপতি। অধীর উল্লেখ করেছেন আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, সুমন পাল, পলাশ ভাণ্ডারী, সুজয় ঘটকদের কথা। বিষয়টি তিনি এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপালের নজরেও এনেছেন। একই প্রশ্ন তুলে এআইসিসি-কে চিঠি পাঠিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক আশুতোষও।
তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সৌজন্য ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও অধীর ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান থেকে তিনি সরছেন না। বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল আমাদের দল ভাঙছে প্রতি দিন। ওরা তো ‘ইন্ডিয়া’য় শামিল হয়ে আমাদের উপরে অত্যাচার বন্ধ করেনি। সেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে চুপ করে গেলে সেই সহকর্মীদের প্রতি অবিচার, অন্যায় করা হবে! আমি পারব না।’’