ব্যাটারিচালিত বাস। —নিজস্ব চিত্র।
বায়ু দূষণ কমাতে শহরের রাস্তায় এ বার বিদ্যুৎচালিত ভলভো বাস।
কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার রাজপথে খুব শীঘ্রই ২০টি বিদ্যুৎ চালিত বাস চলবে। রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, এর মধ্যে ১০টি বাস শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এ ব্যাপারে অর্থ দফতরের প্রয়োজনীয় অনুমোদন মিলেছে। কাল, শুক্রবার বাস কিনতে দরপত্র ছাড়বে রাজ্য পরিবহণ দফতর। এ বছর শীতের মরসুমে, না হলে আগামী বছরের শুরুতে যাত্রীরা পরিবেশ বান্ধব ওই বাসের পরিষেবা পাবেন বলে আশা করছেন দফতরের আধিকারিকেরা। অবস্থা বুঝে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎচালিত বাস বাড়ানো হবে।
বুধবার কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) আয়োজিত ‘গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি কনক্লেভ’ শীর্ষক এক সভায় রাজ্যের পরিবেশ সচিব অর্ণব রায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক পর্যায়ে পরিবহণ দফতর বিদ্যুৎচালিত ২০টি বাস চালাতে উদ্যোগী হয়েছে। এটা সবে শুরু।’’ পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম ওই বাসগুলি কিনছে। ২০টি বিদ্যুৎচালিত বাস কিনতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে দফতর সূত্রের খবর। যার মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের দাম স্বভাবতই বেশি।
পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী চলতি বছরের এপ্রিলেই ঘোষণা করেছিলেন, সরকার কলকাতার রাস্তায় বিদ্যুৎচালিত বাস নামাবে। এখনও পর্যন্ত কলকাতা তথা রাজ্যে পরিবেশ বান্ধব বিকল্প জ্বালানিতে চলা পরিবহণ যান বলতে এলপিজি-চালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত টোটো। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ বা কোনও সংস্থা ব্যাটারিচালিত গাড়ি ব্যবহার করে থাকে। তবে সে সব পরিবহণ যান হিসেবে চালু হয়নি। কিছু দিন আগে কলকাতার রাস্তায় জৈব গ্যাসচালিত বাস নামানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। এ শহরে এখনও সিএনজি-চালিত গাড়িও চালু হয়নি।
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, কলকাতা ও আশপাশের জেলাগুলি মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০ লক্ষ যানবাহন চলে। পরিবেশকর্মীদের একাংশ মনে করেন, শহরের বায়ু দূষণের মুলে গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া।
বাতাসের সেই বিষ কমাতে মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, সিমলা ও লাগোয়া এলাকা এবং গুড়গাঁওতে ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎচালিত বাস চলা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, দেশে প্রথম এমন বাস ২০১৬-র এপ্রিলে মহারাষ্ট্র ও হিমাচল প্রদেশে এক সঙ্গে চলা শুরু করে।। দু’টি রাজ্যই ২৫টি করে বিদ্যুৎচালিত বাস নামিয়েছিল।
দিল্লির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সিএনজি-চালিত বাস এক কিলোমিটার চালিয়ে যেখানে ১৮ টাকা খরচ হয়, সেখানে বিদ্যুৎচালিত বাসের ওই দূরত্ব যেতে খরচ হয় ১২ টাকা। অর্থাৎ সিএনজি-র তুলনায় এটি সস্তা। কলকাতায় এই বাসের ভাড়া কেমন হবে? পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাস্তায় বাস চালিয়ে দেখব, কী রকম খরচ হচ্ছে। সেই বুঝে ভাড়া ঠিক হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে চড়লে একটু বেশি ভাড়়া দিতে হবে।’’
যান দূষণ ও তার প্রতিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন এই সরকারি উদ্যোগকে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘কলকাতাকে বলা হয় ডিজেলচালিত গাড়ির দূষণের রাজধানী। এটা কমাতে যে কোনও উদ্যোগই প্রশংসনীয়। সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। মাথায় রাখতে হবে, বায়ূ দূষণে দিল্লির চেয়ে আমরা কিন্তু বেশি পিছিয়ে নেই।’’
তবে যান দূষণ বিশেষজ্ঞ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও দু’টি ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তাঁর বক্তব্য, প্রথমত, বিদ্যুৎচালিত বাস মানে যার সার সার ব্যাটারি বিদ্যুৎ দিয়ে চার্জ দেওয়া হয়। তাই ডিপোগুলিতে সেই ব্যবস্থা বা পাওয়ার চার্জিং স্টেশন থাকা দরকার। দ্বিতীয়ত, যানজটে আটকে থাকা বাসের ব্যাটারির চার্জ দ্রুত ফুরোবে। যানজট যাতে না হয়, সেটাও তাই নিশ্চিত করতে হবে। তাঁর অভিমত, ‘‘বিদ্যুৎচালিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চালিয়ে আর্থিক লাভ হবে না।’’