১৬ জুলাই অনাস্থা ভোটের পর বনগাঁ পুরসভার সামনে। —ফাইল চিত্র
আগের অনাস্থা বাতিল। বনগাঁ পুরসভায় নতুন করে অনাস্থা প্রস্তাব এনে ভোটাভুটির নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় সোমবার তাঁর রায়ে বলেছেন, ১২ দিনের মধ্যে জেলাশাসকের দফতরে নতুন করে অনাস্থার ভোটাভুটি করতে হবে। সব কাউন্সিলরের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ সুপারকেও। যদিও যে উদ্দেশে অনাস্থা এনেছিলেন বিজেপি কাউন্সিলররা, কার্যত তার আর কোনও ভিত্তি নেই। কারণ দলবদল করে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া কাউন্সিলররা ফের তৃণমূলেই ফিরে এসেছেন। ফলে অনাস্থায় তৃণমূলের জয় একপ্রকার নিশ্চিত বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বনগাঁ পুরসভার মোট ২২টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের ছিল ২০ জন কাউন্সিলর। সিপিএম এবং কংগ্রেসের দখলে ছিল একটি করে আসন। কিন্তু লোকসভা ভোটের পরেই ১৪ জন কাউন্সিলর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। কয়েক দিন পরেই অবশ্য ৩ জন ফিরেও যান তৃণমূলে। ফলে নতুন সমীকরণ দাঁড়ায় বিজেপি ১১, তৃণমূল ৯, কংগ্রেস ১, সিপিএম ১। এই পরিস্থিতিতে অনাস্থা আনে বিজেপি। কিন্তু মামলা গড়ায় হাইকোর্টে। অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশেই ১৬ জুলাইসেই অনাস্থার ভোট হয়।
কিন্তু অনাস্থা ভোট ঘিরে তুমুল গন্ডগোল হয় ওই দিন। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া দুই কাউন্সিলর পুরসভার ভিতরেই ঢুকতে পারেননি। তাই নিয়ে পুরসভা ভবনের বাইরে বিজেপি কর্মী সমর্থক এবং পুলিশের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। বিজেপির অন্য কাউন্সিলরদেরও তৃণমূল অনাস্থা কক্ষেই ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত তৃণমূল দাবি করে, অনাস্থায় জিতে পুরসভা তাদের দখলেই রাখতে পেরেছে। অন্য দিকে বিজেপি কাউন্সিলররাও দাবি করেন, অনাস্থায় জিতেছেন তাঁরা।
কিন্তু সেই অনাস্থারভোট প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যায় বিজেপি। সেই মামলায় বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যকে ব্যাপক ভর্ৎসনা করেন হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। শুনানি চলাকালীনই ফের অনাস্থা এবং প্রয়োজনে মহকুমাশাসক বা জেলাশাসকের দফতরে ভোটাভুটির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিচারপতি। সোমবার সেই মামলাতেই রায় দিলেন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশ, ১২ দিনের মধ্যে জেলাশাসকের দফতরে ফের অনাস্থার ভোটাভুটি করাতে হবে এবং সব কাউন্সিলরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশ সুপারকে।
আরও পডু়ন: অমিত শাহের ডাকা আন্তঃরাজ্য মাওবাদী দমন বৈঠকে গেলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
আরও পড়ুন: ভারতে জেএমবি জঙ্গি গোষ্ঠীর মাথা বীরভূমের ইজাজ এসটিএফের জালে
কিন্তু আগের অনাস্থার পর থেকে এ দিনের রায় পর্যন্ত মাঝের সময়েরাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে গিয়েছে বনগাঁ পুরসভায়। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কাউন্সিলরদের মধ্যে ৪ জন গত ৮ অগস্ট ফের তৃণমূলেই ফিরে এসেছেন। ফলে এখন সমীকরণ দাঁড়িয়েছে তৃণমূল ১৪, বিজেপি ৭। ফলে নতুন অনাস্থা খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত অনিবার্য। অর্থাৎ বনগাঁর ক্ষমতা তৃণমূলের হাতে থাকার সম্ভাবনাই কার্যত নিশ্চিত। অন্য দিকে ভোটাভুটিতেজিতে তৃণমূলকে সরিয়ে বনগাঁ পুরসভা দখলের যে উদ্দেশে অনাস্থা এনেছিল বিজেপি, সেই উদ্দেশ্য সফল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। এ বিষয়ে বনগাঁর চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘রায়ের কপি হাতে না পেয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’