প্রতীকী ছবি।
জাঁতার দিন গিয়েছে। তাই বন্দিশালায় ‘পিষিং, পিষিং অ্যান্ড পিষিং’-এর পালাও শেষ। এসেছে যন্ত্র। তবু বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলে রসনাকে স্বস্তি দেওয়ার তাগিদেই নিজেদের গরজে গম ভাঙছেন বন্দিরা। আসলে পুরনো যন্ত্রটা খোসা-সহ গম ভাঙত। সেই আটার রুটি চিবোতে গেলে দাঁতে লাগত। কিচকিচ করত। খোসা ছাড়ানোর উপায় না-থাকায় সেই রুটি দিয়ে রাতে পেট ভরানো ছাড়া কিছুই করার থাকত না। সম্প্রতি পরিস্থিতি বদলেছে। প্রায় দেড় মাস যাবৎ আর কিচকিচ করছে না দাঁত। কারণ, খোসা ছাড়িয়েই ভাঙানো হচ্ছে গম। সেই আটার রুটিতে দাঁতের কষ্ট নেই।
রাতের পাতে রুটিই পছন্দ করেন বেশির ভাগ বন্দি। ডাল, তরকারি সহযোগে সাধারণ ভাবে চার থেকে ছ'টি রুটি খান প্রত্যেকে। রুটির বদলে কেউ ভাত চাইলে তা-ও মেলে অবশ্য। দণ্ডিত এবং বিচারাধীন মিলিয়ে এখন অন্তত ২৬০০ বন্দি আছেন বহরমপুর জেলে। সেখানে আগেকার যন্ত্রটি গমের খোসা ছাড়াতে পারত না। এক দিনে ছ’-সাত কুইন্টাল গম ভাঙানোর ক্ষমতাও ছিল না তার। যন্ত্র বদল হতেই জেলে গম ভাঙানোর ভোলও বদলে গিয়েছে। এখন এক দিনে খোসা
বাদ দিয়ে ছয়-সাড়ে ছয় কুইন্টাল গম ভাঙানো হচ্ছে অনায়াসে। সেই আটা দিয়ে তৈরি রুটিতে লৌহকপাটের বাসিন্দাদের দাঁতের কষ্ট আর নেই।
এত দিন এক-দেড় কুইন্টাল আটা আসত জেলে ভাঙানো গম থেকেই। বাকি আটা দিতেন ঠিকাদারেরা। যন্ত্র বদলের পরে আর আটা নয়, গম সরবরাহ করেন তাঁরা। গম ভাঙানোর নতুন যন্ত্র কাজ শুরু করে গত পঞ্চমীতে। বন্দিদের রুটির জন্য প্রয়োজনীয় সব গম জেলের অন্দরেই ভাঙানো হচ্ছে। সেই কাজ করছে ১০-১২ জন বন্দির দল। ওই বিপুল পরিমাণ গম ভাঙাতে তাদের সময় লাগছে প্রায় চার ঘণ্টা। নতুন যন্ত্রের কাজ শুরুর দিনেই বহরমপুর জেলে দুর্গাপুজোর উদ্বোধন হয়। ছিলেন কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, এডিজি (কারা) পীযূষ পাণ্ডে, অন্য কর্তারা।
বেশি পরিমাণে গম ভাঙানোর সঙ্গে সঙ্গে গমের খোসাও ছাড়ানো হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে। যা এত দিন সম্ভব ছিল না। ফলে ওই দাঁত কিচকিচ...! এখন আর সেই সমস্যা নেই। পঞ্চমীতে উন্নত মানের আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল পরিষেবাও চালু হয়েছে। তুলনায় উন্নত রুটি আর উন্নততর জল জুটছে বন্দিদের।