শ্যামসুন্দর নন্দী
উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়বে ‘সিলিকোসিস’, বাঙালি এক বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে গবেষণায় তেমনই কিট আবিষ্কার হয়েছে বলে দাবি। ‘আইসিএমআর’ (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ)-এর তত্ত্বাবধানে থাকা ‘এনআইভি’ (ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি) এবং ‘এনআইওএইচ’ (ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অব অকুপেশনাল হেলথ)-এর যৌথ গবেষণায় তা আবিষ্কার হয়েছে। সম্প্রতি ‘আইসিএমআর’ এই কিট-এর অনুমোদনও দিয়েছে।
এই কিট তৈরির নেপথ্যে যিনি রয়েছেন, আদতে পুরুলিয়ার হুড়ার বড়গ্রামের সেই বাসিন্দা শ্যামসুন্দর নন্দী ‘এনআইভি’-র মুম্বই ইউনিটের সহ-অধিকর্তা পদে রয়েছেন। তিনি জানান, ‘এনআইওএইচ’-এর অধিকর্তা কমলেশ সরকার এবং ‘এনআইভি’-র তিন বিজ্ঞানী উপেন্দ্র লাম্বে, সোনালি সাওয়ন্ত ও জগদীশ দেশপাণ্ডে এই কাজে তাঁকে সহায়তা করেছেন। ‘এনআইওএইচ’ সূত্রের খবর, দেশে প্রায় এক কোটি ২৫ লক্ষ মানুষ সিলিকোসিসে আক্রান্ত। পাথরভাঙা কল, কাচের জিনিসপত্র তৈরির কারখানা, কয়লা ক্ষেত্র-সহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দীর্ঘদিন ধরে সিলিকা নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহে ঢুকে ফুসফুসে জমা হয়ে এই রোগ হয়।
বছর পঞ্চাশের শ্যামসুন্দর জানান, এত দিন এই রোগ আগাম নির্ণয়ের কোনও পদ্ধতি ছিল না। যখন রোগ ধরা পড়ে, তত দিনে আক্রান্তের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কমে যায়। ‘এনআইওএইচ’-এর অধিকর্তা কমলেশ সরকারই তাঁকে আগাম এই রোগ নির্ণয়ের বিষয়ে কাজ করার অনুরোধ করেন। শ্যামসুন্দর বলেন, ‘‘এই কিটে এক ফোঁটা রক্ত ফেলে পরীক্ষায় বোঝা যাবে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দেহে সিলিকোসিস বাসা বেঁধেছে কি না।’’ তাঁর দাবি, রক্তে থাকা একটি প্রোটিনের মাত্রা থেকেই এই বিষয়টি জানা যাবে।
‘এনআইওএইচ’-এর অধিকর্তা কমলেশ বলেন, ‘‘বিশ্বের নানা দেশ এই সমস্যার শিকার। এত দিন রোগটি আগাম নির্ণয়ের কোনও পরীক্ষা ছিল না। এই কিট আশার আলো দেখাবে। আইসিএমআর ইতিমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে।’’ শ্যামসুন্দর বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার ন’পাড়া হাইস্কুলের শিক্ষকেরা এবং আমার বাবা হংসেশ্বর নন্দী আমাকে মানুষের জন্য ভাল কিছু করার কথা বলতেন। ভাল কাজ তাঁদেরই উৎসর্গ করতে চাই।’’