পুরনো এক গুচ্ছ প্রকল্প এখনও দিনের আলো দেখেনি। এই অবস্থায় ফের স্বাস্থ্যে একাধিক নতুন প্রকল্পে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার অধিকাংশই মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত।
সমস্ত সরকারি হাসপাতালের সুপারদের বুধবার নবান্নে বৈঠকে ডেকেছিলেন মমতা। সুন্দরবনে আসন্নপ্রসবাদের জন্য যে অপেক্ষাগৃহ (মাদার্স ওয়েটিং হাব) পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হয়েছে, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এবং আদেশ দিয়েছেন, রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার হাসপাতালগুলোয় অবিলম্বে এই ধরনের অপেক্ষাগৃহ চালু করতে হবে। মমতার বক্তব্য: অজ পাড়াগাঁয়ের আসন্নপ্রসবাকে শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে পৌঁছাতে বিস্তর বেগ পেতে হয়। প্রসূতি ও সদ্যোজাতের বিপদ বাড়ে। ওয়েটিং হাব থাকলে মা-শিশুর স্বাস্থ্য অনেকটা সুরক্ষিত হবে। বাড়বে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার।
একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন, দরিদ্র সদ্যোজাতদের দত্তক নেওয়ার সরকারি প্রকল্প চালু করতে। তাঁর প্রস্তাব: সরকারি হাসপাতালে জন্মানো হতদরিদ্র পরিবারের বাচ্চাদের কয়েকটিকে বড় করার দায়িত্ব নিক রাজ্য। এতেও প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সংখ্যা বাড়বে বলে তাঁর আশা।
রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানিয়েছেন, রোগী ও তাঁদের পরিজনের অভিযোগ গ্রহণ আর অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এটা ঠিকঠাক হলে হাসপাতালে ভাঙচুর ও ডাক্তারদের উপরে হামলায় রাশ টানা যাবে। বস্তুত বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারেরা যে ভাবে রোগীর বাড়ির লোকের সঙ্গে গোলমালে জড়িয়ে পড়ছেন, মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী তা দেখে যারপরনাই উদ্বিগ্ন। দু’পক্ষের প্রতি তাঁর আবেদন— আরও সংবেদনশীল হোন, সংযত থাকুন। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পানীয় জল, শৌচাগার, অপেক্ষা করার জায়গা ইত্যাদির সংস্থান করার উপরেও তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন।
পাঁচ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম বার সরকার গড়ে মমতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যক্ষেত্রে মানবিকতার ছোঁয়াকে মানুষের মন পাওয়ার হাতিয়ার করতে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দ্বিতীয় ইনিংসে সেটাই তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। হাসপাতালের সুপারেরা এ দিন স্পষ্ট নির্দেশ পেয়েছেন, সরকারি স্বাস্থ্য-পরিষেবার সর্বত্র যেন মানবিকতার ছোঁয়া থাকে। সমস্ত স্তরে যথাযথ নজরদারি চালাতে হবে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর কাজের মূল্যায়ন হওয়া চাই। উপরন্তু আগের বার কুর্সিতে বসেই মমতা স্বয়ং বিভিন্ন হাসপাতালে আচমকা পরিদর্শন শুরু করেছিলেন। কর্তারা তটস্থ হয়ে থাকতেন। এ বারও সেই ধাঁচে পরিদর্শনের ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিকে অভিযোগ উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রী ‘ফ্রি’ ঘোষণা করা সত্ত্বেও বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারেরা রোগীদের বলছেন বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে। মুখ্যমন্ত্রীর কী বক্তব্য?
মমতার সাফ কথা, হাসপাতালে মজুত ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা করতে হবে। যাঁরা রোগীর বাড়ির লোককে বাইরের ওষুধ কিনতে বাধ্য করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ‘যথাযথ’ ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, কোথাও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে দিয়ে ড্রেসিং করানো চলবে না। ওই কাজটা নার্সদের।