কী পড়ব কেন পড়ব বায়োটেকনোলজি

বায়োলজি + টেকনোলজি

আগে বায়োলজি বলতে ছিল— জুওলজি, বোটানি, ফিজিওলজি। এখন বায়োলজিরই আরও নানা শাখায় পড়ানো হচ্ছে—মাইক্রোবায়োলজি, এনভায়রনমেন্ট বায়োলজি, বায়োটেকনোলজি ইত্যাদি। কোনটা কী, কোনটা পড়ে কাজের সুযোগ বেশি এই নিয়ে প্রশ্ন বিস্তর। তুল্যমূল্য বিচার করে শিক্ষাবিদরা এগিয়ে রাখছেন বায়োটেকনোলজিকে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০৩:২৭
Share:

আগে বায়োলজি বলতে ছিল— জুওলজি, বোটানি, ফিজিওলজি। এখন বায়োলজিরই আরও নানা শাখায় পড়ানো হচ্ছে—মাইক্রোবায়োলজি, এনভায়রনমেন্ট বায়োলজি, বায়োটেকনোলজি ইত্যাদি। কোনটা কী, কোনটা পড়ে কাজের সুযোগ বেশি এই নিয়ে প্রশ্ন বিস্তর। তুল্যমূল্য বিচার করে শিক্ষাবিদরা এগিয়ে রাখছেন বায়োটেকনোলজিকে।

Advertisement

নামের মধ্যেই বিষয়টা সম্পর্কে অনেকটা বলা—বায়োলজির সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি। মূলত দু’টি দিকে বিষয়টি ভাগ করা যায়—১) রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিভিন্ন রোগের কারণ ও চিকিৎসা, কৃষির উন্নয়ন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পরিবেশ রক্ষার মতো কাজ নিয়ে গবেষণা) ২) ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রসেস (বায়োকেমিক্যাল কৌশলে ওষুধ, ভ্যাকসিন, বায়োফুয়েল ও ফার্মাসিউটিক্যাল দ্রব্য উৎপাদন)। এক কথায় এটা এমন একটা অ্যাপ্লিকেশন কোর্স যেটা জুওলজি থেকে মাইক্রোবায়োলজি —বায়োলজির সমস্ত রূপে বিচরণকারী।

বায়োটেকনোলজিতে বিটেক ডিগ্রি করা যায় আবার বিএসসি-ও পড়া যায়। এই রাজ্যে বিএসসি কোর্স পড়ানো হয় কম জায়গায়। কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ইন্টিগ্রেটেড বিএসসি-এমএসসি করা যায় বায়োটেকনোলজিতে। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি আছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে বায়োটেকনোলজিতে বিএসসি পড়া যায়। আর হাতে গোণা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিএসসি হয়। এই নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে আক্ষেপ রয়েছে। তবে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির, বেলুড়মঠের শিক্ষক শান্তনু মৈত্রর আশ্বাস, ‘‘বায়োলজির যে কোনও শাখায় স্নাতক হওয়ার পরে বায়োটেকনোলজিতে মাস্টার্স করা যেতে পারে। তাই স্নাতক স্তরে এই নিয়ে পড়তে না পারলে চিন্তার কিছু নেই। মাস্টার কোর্স পড়া যায় এই রাজ্যের প্রায় সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে।’’

Advertisement

এদিকে, এই রাজ্যে বেশ কিছু বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বায়োটেকনোলজিতে বিটেক কোর্স করা যায়। সেক্ষেত্রে জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিতে হবে।

বিটেক-এ বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের (মাইক্রোবায়োলজি, মলিকিউলার বায়োলজি, জেনেটিক্স, সেল বায়োলজি ইত্যাদি) পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং দিকে (বায়োপ্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, থার্মোডায়নামিক্স, মাস ট্রান্সফার ইত্যাদি) জোর দেওয়া হয়।

বিএসসি কোর্সে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রসেসের মধ্যে বেশি না গিয়ে গবেষণাধর্মী দিকটিতেই জোর দেওয়া হয়— বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, প্ল্যান্ট অ্যান্ড অ্যানিমাল বায়োটেকনোলজি, মাইক্রোবায়াল জেনেটিক্স ইত্যাদি।

বিটেক ভাল না বিএসসি—নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। যদি পড়াশোনা বা গবেষণা করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে বিএসসি কোর্স করার পরে এমএসসি, পিএইচডি—এই ভাবে এগিয়ে যাওয়া ভাল। আর চাকরি পাওয়া বা কর্মসংস্থান যদি অগ্রাধিকার থাকে, সেক্ষেত্রে বিটেক কোর্স করা যায়। সফটওয়্যার বা ম্যানেজমেন্টে চলে যাওয়ার একটা সুযোগ থাকে সেক্ষেত্রে।

তবে, এই চলে যাওয়ার দরকার হয় না। কারণ বায়োটেকনোলজি পড়ে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, রিসার্চ ল্যাবরেটরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রচুর কাজের সুযোগ এবং দিন দিন সেটা আরও বাড়ছে।

নিয়োগকারী কোম্পানিগুলির মধ্যে হিন্দুস্তান লিভার, থাপার গ্রুপ, ইন্দো-আমেরিকান হাইব্রিড সিডস, ইন্ডিয়ান ভ্যাকসিন কর্পোরেশনস, হিন্দুস্তান অ্যান্টিবায়োটিক্স, সান ফার্মা, বায়োকন, আইএফজিএল বায়োসেরামিক্স লিমিটেড, অরবিস মেডিক্যাল, ইনভাইট্রোজেন, রিলায়্যান্স লাইফ সায়েন্সেস, সিটিএস লাইফ সায়েন্সেস, ডক্টর রেড্ডিস ল্যাবস, জুবিল্যান্ট লাইফ সায়েন্সেস, টরেন্ট ফার্মা, রনবাক্সি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে আইআইএসসি, টিআইএফআর, জেএনইউ, অাইআইটি, আইআইএসইআর। রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মধ্যে রয়েছে সেন্টার ফর সেল অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি, কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ, জওহরলাল নেহরু সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড সায়েন্টিফিক রিসার্চ, ন্যাশনাল ব্রেন রিসার্চ সেন্টার, রাজীব গাঁধী সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইমিউনোলজি—আরও নানা।

তবে, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে এখনও এই ক্ষেত্রটির পূর্ণাঙ্গ বিকাশ হয়নি। বেতন অনেক সময়ই প্রত্যাশার তুলনায় কম হয়। আর খালি ব্যাচেলর কোর্স করে লাভ হয় না। বায়োটেকনোলজিতে এমএসসি, পিএইচডি, এমটেক, এমবিএ— শিক্ষার ধাপ যত বাড়বে, তত ভাল কেরিয়ার হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement