দিঘায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
করোনার মোকাবিলায় লকডাউনে বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জনজীবন। লকডাউনের তৃতীয় দফার শেষে কিছুটা ছন্দে ফিরতে চাইছেই মানুষ। কিন্তু তার মধ্যেই নতুন করে উদ্বেগ বাড়াল ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’।
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ক্রমশ শক্তি বাড়াতে থাকা এই নিম্নচাপের জেরে রবিবার রাত থেকেই উপকূলবর্তী এলাকা -সহ জেলায় এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে পারে বলে আবহাওয়া দফতর পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রবল বেগে ঝড়ের পাশাপাশি রয়েছে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস। তার জেরে উপকূলবর্তী এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে প্রশাসন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর।
দিঘা, রামনগর ও মন্দারমণি সহ জেলার উপকূলবর্তী এলাকা এবং হলদিয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সতর্ক করতে শনিবার থেকেই মাইক প্রচার শুরু করেছে পুলিশ-প্রশাসন। ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কাঁথি-১ ব্লকের জুনপুট থেকে রামনগর- ২ ব্লকের মন্দারমণি পর্যন্ত উপকূল এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছে প্রশাসন। ওই সব এলাকায় থাকা মৎস্যখটিগুলি থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কাঁথি-১, দেশপ্রাণ ও রামনগর-১, ২ ব্লকের সাইক্লোন রেসকিউ সেন্টার, ফ্লাড শেল্টারের পাশাপাশি এলাকার বেশ কিছু স্কুলভবনে বিপন্ন মানুষের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কাঁথির মহকুমাশাসক শুভময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা এসে পৌঁছেছে। সব রকম প্রস্তুতি আমরা সম্পূর্ণ করেছি। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’
আসছে আমফান। তার আগেই মাঠ থেকে পাকা ধান ঘরে তোলার তোড়জোড়। রবিবার পাঁশকুড়ার জিয়াখালিতে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
কাঁথি মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, মূলত যে সব ফ্লাড শেল্টারে কোয়রান্টিন সেন্টার করা হয়েছে সেগুলি বাদ দিয়ে বাকি ফ্লাড শেল্টার ও সাইক্লোন রেসকিউ সেন্টারে ও স্কুলভবনে বাসিন্দাদের রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। করোনা সতর্কতা বিধি অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব মেনে বাসিন্দাদের থাকার জন্য সাইক্লোন রেসকিউ, ফ্লাড শেল্টার ছাড়াও সংল্লগ্ন এলাকার স্কুলভবন নেওয়া হচ্ছে। দুর্যোগে বিপন্ন মানুষদের উদ্ধারে রবিবার দুপুরেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের (এনডিআরএফ) ৩২ জন সদস্য দিঘায় পৌঁছে গিয়েছেন। এ ছাড়াও রাজ্য সরকারের সিভিল ডিফেন্সের একটি দল দিঘায় ও একটি দল হলদিয়ায় রাখা হচ্ছে। উদ্ধার কাজের পাশাপাশি বিপন্ন মানুষকে ত্রাণ দিতে প্রতি ব্লকে শুকনো খাবার-সহ অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর দফতর সূত্রে খবর, জেলার ৪৩টি সাইক্লোন রেসকিউ ও ৩০টি ফ্লাড সেন্টার ও প্রতি সেন্টার সংলগ্ন তিনটি করে স্কুলভবন বিপন্ন বাসিন্দাদের রাখার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিপন্ন বাসিন্দাদের রান্না করা খাবার দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি রাখতে উপকূলবর্তী এলাকার সমস্ত পঞ্চায়েত এবং বিডিও অফিস খোলা থাকছে।
আগামী মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আমফানের প্রভাব চলবে বলে জানা গিয়েছে।
বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা দফতরের জেলা আধিকারিক মৃত্যঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘রবিবার রাত থেকে জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার উপকূল এলাকা-সহ জেলায় এই ঝড় আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে। সেইসঙ্গে ৭০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। কাঁথি ও হলদিয়া মহকুমায় সবচেয়ে বেশি ঝড়ের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা। পরিস্থতি মোকাবিলায় আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দুর্যোগ চলাকালীন বাসিন্দাদের উদ্ধারে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’’